বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

শিক্ষা যোগাযোগ কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছে যশোর

সাইফুল ইসলাম, যশোর

শিক্ষা যোগাযোগ কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছে যশোর

যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আইসিটি, শিক্ষা, যোগাযোগ, কৃষিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে যশোর। বর্তমান সরকারের আমলেই যশোরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। গড়ে তোলা হয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজ। আকাশপথ, নৌপথ, সড়কপথ, রেলপথে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। এর ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতু চালু হলে যশোর ও আশপাশের এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। তৃণমূলের মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করতে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় উদ্যোগের নাম যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। গত কয়েক দশকের মধ্যে যশোর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেরা উপহার এ পার্কটি। যশোর শহরের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে বিশাল জায়গাজুড়ে ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি এখন পূর্ণ উদ্যমে কর্মমুখর। আধুনিক নির্মাণশৈলীতে তৈরি যশোর অঞ্চলের সবচেয়ে  দৃষ্টিনন্দন এ পার্কটিতে প্রতিদিন কেবল বিনিয়োগকারী, কর্মীরাই ভিড় করেন না, আসেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ প্রচুর দর্শনার্থীও।

২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি উদ্বোধন ও বিনিয়োগকারীদের জন্য খুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পার্কের মূল ভবনটি ১৫ তলাবিশিষ্ট, যা এমটিবি বা মাল্টি ট্যানেন্ট বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত। আছে ১২ তলাবিশিষ্ট একটি ডরমেটরি, যা তিন তারকা মানের। এ দুটি বিল্ডিংই ভূমিকম্প প্রতিরোধক স্টিল ও কংক্রিটের কম্পোজিট কাঠামোয় তৈরি। এর পাশেই রয়েছে তিনতলা ক্যান্টিন ও অ্যামফিথিয়েটার ভবন। ১৫ তলা এমটিবি ভবনে রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং ব্যবস্থা। এ ভবনে বিনিয়োগকারীদের জন্য রয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার বর্গফুট স্পেস, যার পুরোটাই এখন বিনিয়োগকারীদের কর্মকান্ডে মুখর। ১ লাখ বর্গফুটের ১২ তলা ডরমেটরি ভবনের একটি ফ্লোরে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের জিম। পুরো পার্কে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আছে ৩৩ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন। আছে দুই হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি জেনারেটর। ডরমেটরি ভবনের সামনে আছে পাঁচ একরের বিশাল জলাধার, যা পার্কের সৌন্দর্য অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।

যশোরে এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি নির্মাণ করেই সরকার থেমে থাকেনি। এখানকার বিনিয়োগকারীদের যাতে কর্মী সংকটে না পড়তে হয় সে জন্য বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি ও আইসিটি বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী সরকার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যশোরে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষ দাবি করে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকার যশোর শহরের দক্ষিণাংশে হরিনার বিলে ২০১০ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ যশোর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। 

আকাশপথে যোগাযোগের জন্য গত ৬৫ বছর ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষ যশোর বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে থাকেন। ১৯৫৬ সালে ২৮৭ একর জমির ওপর এ বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখানে আর তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমান সরকার বিমানবন্দরটিতে আধুনিক ও আন্তর্জাতি কমানের করে গড়ে তোলার জন্য ৩২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এর আওতায় অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন, পার্কিং জোন, নতুন করে কনভেয়ার বেল্ট, অ্যারাইভ্যাল ও ভিআইপি লাউঞ্জ তৈরিসহ নানা কাজ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি শেষ হলে টার্মিনালে যাত্রী ধারণক্ষমতা যেমন দ্বিগুণ হবে, তেমনি যাত্রীরাও আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেমন অভাবনীয় উন্নতি হবে, তেমনি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও বড় ধরনের প্রভাবকের মতো কাজ করবে এ সেতু।’ এ সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যশোর ও বেনাপোলের সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে। ২০২৪ সাল নাগাদ এ কাজ শেষ হলে যশোর-বেনাপোলের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব অর্ধেকেরও বেশি কমে আসবে। বর্তমানে যশোর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে ৪৭৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে এ দূরত্ব ১৬৫ কিলোমিটারে দাঁড়াবে, অর্থাৎ দূরত্ব কমবে ৩০৮ কিলোমিটার। আর বেনাপোল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব ৫১৮ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে এ দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও দূরত্ব কমবে ৩১৮ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পথে স্টেশন থাকবে ১৪টি এবং ১০০টি ব্রডগেজ কোচ সংযুক্ত করা হবে। যশোর-ঢাকা ১৬৯ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে ২৩ কিলোমিটার থাকবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল রেলপথ)। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে খুলনা-যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। পুরো প্রকল্পটি শেষ হলে যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প কলকারখানা, কৃষি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। ইতিমধ্যে এসব বিষয়কে সামনে রেখে বহু উদ্যোক্তা প্রস্তুতিও শুরু করেছেন।

যশোর শহরসহ অসংখ্য শহর, নগর সৃষ্টির পেছনে এ অঞ্চলের দীর্ঘতম নদ ভৈরবের রয়েছে প্রধান ভূমিকা। কিন্তু মানবসৃষ্ট নানা প্রতিকূলতার কারণে এ নদের উজানের প্রায় ৯৬ কিলোমিটার অংশ মরতে বসেছে। যশোরসহ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার ভৈরব খনন করার উদ্যোগ নেয়। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, নদের ৯৬ কিলোমিটার অংশ খনন করে নৌ যোগাযোগ চালু করতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৭২ কোটি টাকা। বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ প্রকল্পটি শেষ হলে যশোরের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ সহজ হবে, খরচ কমবে, পাশাপাশি সড়কপথের ওপর চাপও অনেকটা কমে যাবে।

সর্বশেষ খবর