শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা চ্যালেঞ্জে অর্থনীতির রোডম্যাপ

থাকছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা

মানিক মুনতাসির

করোনা চ্যালেঞ্জে অর্থনীতির রোডম্যাপ

করোনা-পরবর্তী দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অর্থ, পরিকল্পনাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সমন্বয়ে একটি রোডম্যাপ করতে যাচ্ছে সরকার। এতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের জন্য থাকবে বিশদ পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা কতটা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো চালু হয়েছে কি না, চালু না হলে কীভাবে চালু করা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা ও পরিকল্পনা নেওয়া হবে। যেসব উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়েছেন তাদের আরও কোনো প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না তাও বিবেচনায় নেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, এমন মহামারী মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও একটি ধারণাপত্র থাকবে এই রোডম্যাপে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কভিড-পরবর্তী অর্থনীতির জন্য সরকার একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে। এতে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, রপ্তানি, কৃষি খাতসহ অর্থনীতির উৎপাদনশীল খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু এই রোডম্যাপের কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে।

তবে এটি এখনো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের মাত্র তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। প্রথম দুই মাস এডিপির বাস্তবায়নসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ছিল নেতিবাচক ধারায়। পরের মাসেই অবশ্য এসব সূচক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। টানা লকডাউন বা সাধারণ ছুটির পর সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় শুরু হওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো এতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করে সরকার। আগামী বছরের      বাজেটের সঙ্গে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এই রোডম্যাপ যুক্ত করা হতে পারে। আবার বছরের মাঝামাঝিতে বাজেট সংশোধনের সময়ও এটি যুক্ত করা হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এ নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারীর সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। সচল হয়েছে কৃষি, শিল্পসহ অর্থনীতির প্রায় সব কটি খাত। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাসে (সেপ্টেম্বর-২০২১) রাজস্ব আদায় ও পণ্য রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জিত হবে, যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় কাছাকাছি। চলতি বাজেটে সরকারের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বিপর্যস্ত অর্থনীতি টেনে তোলার জন্য বিগত ও চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার, যা এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্যাকেজগুলোই কৃষি, বৃহৎ শিল্প এবং এসএমই ও এমএসএমই খাতকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলেছে বলে মনে করে সরকার। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্যাকেজগুলো শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলে অর্থনীতির চেহারা আরও পাল্টে যেত। কেননা এসএমই ও এমএসএমই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় অর্ধেকই বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে করোনা মহামারীর সংকট কাটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আবার দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফায় সংক্রমণ বাড়ায় অনেক দেশের অর্থনীতি নতুন করে সংকটেও পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবশ্য অনেকের তুলনায় ভালো করছে। এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও প্রভাবশালী গণমাধ্যমও করোনা মোকাবিলা ও বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে।

এদিকে মহামারী করোনার প্রভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এখনো কর্মহীন রয়েছে বহু মানুষ। বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে প্রায় ১২ লাখ প্রবাসী শ্রমিক। ফলে করোনা-পরবর্তী কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করছে সরকার। অবশ্য চলতি বছরের বাজেটে জীবন ও জীবিকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, এর শতভাগ বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করেনি সংশ্লিষ্টরা। আবার নতুন করে কোনো পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ যেটাই করা হোক, সেখানে তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত হবে বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি দিনমজুর ও গরিব শ্রেণির মানুষদের জন্যও নতুন করে কিছু করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর