শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভুল নম্বরেই ছিল আসল খুনি

মির্জা মেহেদী তমাল

ভুল নম্বরেই ছিল আসল খুনি

লিমা বেগম শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। রাত ১০টায় তার স্বামী সজীব আলী শেখ তাকে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেন। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন বলেছেন। কিন্তু রাত অনেক বেশি হয়েছে। লিমা বেগম বাসায় ফেরেননি। তার স্বামী সজীব শেখ আবারও ফোন দেন। কিন্তু লিমার ফোন বন্ধ। এবার তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েন। লিমার ফোন বন্ধ থাকার কথা নয়। বাইরে থাকলেও ফোনে তাকে জানিয়ে দেন লিমা। রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের মধ্যে ফোনে কথা হয়েছে। এরপর থেকে ফোন বন্ধ পেয়েছেন সজীব শেখ। নানা চিন্তায় রাত কাটে সজীবের। গত ৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা এটি।

পরদিন স্ত্রীর খোঁজে রাস্তায় নামেন সজীব শেখ। বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। কোথাও নেই। সারা দিন খুঁজে কোথাও পাওয়া যায়নি লিমাকে। এর পরদিন হাসপাতালগুলোতে খোঁজ শুরু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ঘুরে এসে সজীব যান শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। সেখানে নেই। এরপর মর্গে মৃতদের তালিকায় তার স্ত্রীর নাম খুঁজতে থাকেন। অজ্ঞাত এক নারীর লাশের কথা উল্লেখ রয়েছে। মর্গের ভিতরে গিয়ে খুঁজে পান তার স্ত্রী লিমা বেগমের লাশ। মর্গেই শুনতে পান, লাশটি শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ নিয়ে এসেছে মর্গে। সজীব ছুটে যান থানায়। জানতে চান, তার স্ত্রীর লাশ কোথায় ছিল। পুলিশ তাকে জানায়, লিমার লাশ ৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় উদ্ধার করা হয়েছে। শ্যামলী এলাকায় অবস্থিত রাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করে। হোটেলের একটি কক্ষে খাটের সঙ্গে ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা ছিল। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। লিমার স্বামী সজীব কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না, তার স্ত্রীর খুনি কারা। তিনি শেরেবাংলানগর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের জোনাল টিম। পুলিশ প্রথমেই আবাসিক হোটেলের নিবন্ধন খাতা চেক করে। নির্ধারিত ওই রুমটি ভাড়া নিয়েছিলেন খোকন ভুইয়া। তার ফোন নম্বরও ছিল। কিন্তু নম্বরটি ছিল ভুল। একটি সংখ্যা কম লিখেছেন খোকন ভুইয়া। পুলিশ এতে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়, খোকন ভুইয়া খুনি হতে পারে। ইচ্ছা করেই ফোন নম্বরটি তিনি ভুল দিয়েছেন। পুলিশ এরপর হোটেলের সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ নিয়ে খোকন ভুইয়াকে শনাক্ত করে। পুলিশ অসম্পূর্ণ সেই ফোন নম্বরটিতে একটি করে নম্বর যুক্ত করে প্রতিটি নম্বরের কললিস্ট চেক করে। এরপর একটি নম্বর খুঁজে পায় পুলিশ, যে নম্বরটি ঘটনার সময় হোটেলেই লোকেশন ছিল। পুলিশ নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালায় ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকায়। গ্রেফতার করে খোকনকে। পুলিশের জেরায় খোকন ভুইয়া স্বীকার করেন খুনের ঘটনা। খুলে বলেন সবকিছু। খোকন এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশে ফিরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে দুজনে বিয়ার পান করেন। এরপর চলে আসেন ফার্মগেট এলাকায়। রাত ২টার দিকে ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের ওপর লিমা বেগম ওরফে কবিতা (২৫) নামে এক নারীর সঙ্গে তার কথা হয়। ৩ হাজার টাকার চুক্তিতে তার সঙ্গে হোটেলে রাত কাটাতে সম্মত হন লিমা। তারা রাত কাটাতে চলে যান শ্যামলীর দুই নম্বর সড়কের ৪/১ নম্বর ভবনে রাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলটির ষষ্ঠ তলার ৬০২ নম্বর কক্ষে ওঠেন। সেখানে তারা অন্তরঙ্গ সময় কাটান। তবে পরে লিমা ২০ হাজার টাকা দাবি করে বসেন। টাকা না পেলে চিৎকার করে সবাইকে বিষয়টি বলে দেবেন বলেও হুমকি দেন। এ নিয়ে দুজনের বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন খোকন। খোকন গ্রেফতারের পর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর