রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইয়াবার নিরাপদ বাহক রোহিঙ্গা নারী

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি এড়ানোই লক্ষ্য

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়াবার ক্যারিয়ার হিসেবে। নারীদের দিয়ে ইয়াবা পাচার করলে চালান জব্দ হওয়ার শঙ্কা থাকে কম। প্রশাসনের নজরদারিও এড়ানো যায় সহজে। তাই এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগাতেই কক্সবাজার থেকে বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীদের।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘নারীদের সঙ্গে বাচ্চা থাকলেও প্রশাসন সন্দেহের চোখে দেখে না। এটাকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নজরে আসার পর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে প্রতিটি ইউনিটকে নারীদের বিশেষ কৌশলে ইয়াবা পাচারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা পাচারের জন্য নারীদের ব্যবহার করছে মাদক পাচার চক্রের সদস্যরা। মূলত রোহিঙ্গা নারীদের মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।’

জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে মাদক মাফিয়ারা। ইয়াবার চালান শরণার্থী ক্যাম্পে আসার পর তা রোহিঙ্গা নারীদের মাধ্যমে কক্সবাজারের হোটেল জোনে এনে পাইকারদের কাছে তা সরবরাহ করা হয়। আবার কিছু চালান টেকনাফ থেকে চলে যায় কক্সবাজারের কুরুলিয়া, বাংলাবাজার, ইসলামপুর, ঈদগাহ এবং

 রামু এলাকার সুনির্দিষ্ট কিছু স্পটে। এ স্পটগুলো থেকেও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীদের। ইয়াবা ক্যারিয়াররা পেটিকোট ও অন্তর্বাসে বিশেষ পকেট তৈরি করে, শরীর ও গোপনাঙ্গে বেঁধে এবং বিশেষ কায়দায় তৈরি করা ইয়াবার বড়ি খেয়ে পেটের মধ্য করে দেশের বিভিন্ন জায়গার পাচার করছে চালান। একেকটি চালানে ইয়াবার পরিমাণ বেঁধে ক্যারিয়াররা পান ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা নারীদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে। কেউ একবার মাদক মাফিয়াদের ফাঁদে পা দিলে চক্র থেকে বের হতে পারে না। এরপর তারা ইয়াবা বহনকে পেশা হিসেবেই নিয়ে নেয়।’ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘নারীদের তল্লাশি করতে নারী সদস্যের পাশাপাশি তল্লাশি করার জন্য আলাদা কক্ষ দরকার, যা সব চেকপোস্টে থাকে না। প্রশাসনের এ দুর্বলতাকে মোয়া হিসেবে নিয়েই নারীদের ইয়াবার ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক মাফিয়ারা।’ ১৪ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ রেহেনা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারীকে গ্রেফতার করে এপিবিএন-১৪। ১১ আগস্ট ৯৭৫ পিস ইয়াবাসহ নুর বেগম নামে এক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে চকরিয়া থানা পুলিশ। ২৪ জুন অভিনব কায়দায় ইয়াবা পাচারের সময় সাবিকুন নাহার ও রশিদা খাতুন নামে দুই রোহিঙ্গা নারীকে গ্রেফতার করে সীতাকুন্ড থানা পুলিশ।  এর আগে ২০ মে কক্সবাজারে অভিযানে চালিয়ে পুলিশ ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ হাসিনা খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা নারীকে গ্রেফতার করে।

সর্বশেষ খবর