শিরোনাম
রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
রূপপুর

পরমাণু বিদ্যুতের হৃৎপিণ্ড বসেছে, আজ উদ্বোধন

জিন্নাতুন নূর

পরমাণু বিদ্যুতের হৃৎপিণ্ড বসেছে, আজ উদ্বোধন

দেশের পরমাণু বিদ্যুতের ইতিহাসে আজকের দিনটি হতে যাচ্ছে একটি ঐতিহাসিক দিন। পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের প্রধান যান্ত্রিক অবকাঠামো ভিভিইআর-১২০০ চুল্লিপাত্র বা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন শেষে আজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বেলা ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করবেন। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের মতে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান যান্ত্রিক অংশ হলো রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল। এটিকে  পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘হৃৎপি-’ও বলা যেতে পারে, যা এরই মধ্যে স্থাপিত হয়েছে। এর আগে প্রকল্পটির ভূমি-ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছরের মধ্যে নির্মাণ স্থাপনার ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হবে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে অবশিষ্ট কাজও শেষ করা হবে। আশা করা হচ্ছে ২০২৩ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে এবং তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে।

আজ প্রকল্প এলাকায় রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের আগে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন রূপপুর প্রকল্পের বাংলাদেশি ও রুশ কর্মকর্তারা।

রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল বলেন, ‘১০ অক্টোবরের দিনটি বাংলাদেশের পরমাণু কর্মসূচির জন্য গর্বের একটি দিন হতে যাচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসরণ করে পারমাণবিক চুল্লি ডিজাইন পজিশনে বসানোর জন্য সব প্রক্রিয়া শেষ করেছি। একই সঙ্গে রাশিয়ান ফেডারেশনের রেগুলেটরি বডি এ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে হয়েছে কি না তা সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে নিশ্চিত হয়েছে। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক সব নির্দেশনা মেনে এই পরমাণু চুল্লিপাত্র বসানোর কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে এর চূড়ান্ত পজিশন প্লেস করা হবে।’ তিনি জানান, মহামারীর মধ্যেও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের পরপর আগামী নভেম্বরে স্থাপন করা হবে স্টিম জেনারেটর। এর মাধ্যমে প্রথম ইউনিটে সব ধরনের নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হবে। এরই মধ্যে ইউনিট-২ এর কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিভিন্ন প্রস্তুতি-পর্ব শেষে প্রথমত ভৌত অবকাঠামো তৈরি করা হয়। এরপর সেসব অবকাঠামোর মধ্যে পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। ভৌত কাঠামো নির্মাণের পর খুব দ্রুতগতিতে চলে যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ। বর্তমানে ভৌত কাঠামো নির্মাণ গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করা হচ্ছে রাশিয়ায়। রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ বলেন, রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের প্রক্রিয়াটি রূপপুর প্রকল্পটি জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানেই এর স্থাপন কাজ নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত এ প্রকল্পের নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এটি এখন পর্যন্ত আর্থিক বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর বেশির ভাগ খরচ (৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি) রাশিয়া সরকারের ঋণ সহায়তা থেকে দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর