শিরোনাম
সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

রেলস্টেশন যেন ভূতের বাড়ি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

রেলস্টেশন যেন ভূতের বাড়ি!

বগুড়ার আদমদীঘির ছাতিয়ান গ্রামে রেল স্টেশনটি যেন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এক সময়ে ট্রেনের হুইসেল, হকারের হাঁকডাক ও মানুষের পদচারণায় মুখর থাকা স্টেশনটিতে এখন সুনসান নীরবতা। স্টেশন চত্বর গাছগাছালিতে ভরে উঠেছে। নীরব স্টেশনটি এখন অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদক সেবনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে স্টেশনে ট্রেন না থামায় আশপাশের শতাধিক গ্রামের মানুষকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা যায়, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামটির কৃষিকাজের জন্য বেশ নামডাক রয়েছে। এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন নাটোরের জমিদার রানী ভবানী। কৃষির পাশাপাশি গরু, ছাগল লালন-পালনেও রয়েছে কৃষিফার্মের অবদান। ছাতিয়ান গ্রামের স্টেশনে একসময় ট্রেন থামলেও এখন তা শুধুই স্মৃতি। স্টেশনটি দেখে মনে হয় এ যেন একটি ভূতের বাড়ি। প্রায় ১৫ বছর ধরে স্টেশনটি বন্ধ। এই স্টেশনে লোকাল বা মেইল কোনো ট্রেনই আর থামে না। ট্রেনে চলাচলকারীদের যেতে হয় প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে। ১৫ বছরে স্টেশন চত্বরটিতে বেড়েছে শুধু আগাছা। ঘুরে বেড়ায় গরু-ছাগল। দিনের বেলায়ও যেন গা ছমছমে ভাব। অথচ এক সময় স্টেশনটি থাকত লোকেলোকারণ্য। আদমদীঘি উপজেলার নিমাইদীঘি গ্রামের আফাজ উদ্দীন শেখ জানান, ব্রিটিশ আমলে সান্তাহার শহরকে উঁচু করার জন্য মাটি প্রয়োজন হওয়ায় ছাতিয়ান গ্রাম থেকে ট্রেনের মাধ্যমে মাটি কেটে নিয়ে আসার জন্য সেখানে একটি সাব-স্টেশন তৈরি করা হয়। ট্রেনের কয়লার (স্টিম) ইঞ্জিনে পানি নেওয়ার জন্য একটি বৃহৎ কূপ খনন করা হয়। মাটি কাটা শেষ হলে সাব-স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলে আক্কেলপুরের প্রয়াত মজিবর রহমান এমএলএ পদে দাঁড়ানোর পর ছাতিয়ান গ্রামে এলে এলাকাবাসী তার কাছে রেলস্টেশনের জন্য দাবি জানান। রানী ভবানীর জন্মস্থান ও মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এবং এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি স্টেশনের অনুমোদনসহ টিকিট নিয়ে চলে আসেন।

ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দীন সরকার জানান, তখন স্টেশন দৃশ্যমান ও টিকিট কাউন্টার না থাকায় স্টেশন সংলগ্ন প্রয়াত ইলিম সরকারের বৈঠকখানা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘিরে স্টেশনটি দৃশ্যমান করা হয় এবং সেখান থেকে টিকিট বিক্রি হয়। সে সময় এ স্টেশনে একাধিক ট্রেন থামত। কৃষকরা ট্রেনযোগে এলাকার উৎপাদিত শস্য সহজেই পরিবহন করত। এ ছাড়া ছাতিয়ান গ্রামে মহিষ, গরু ও ঘোড়ার জমজমাট হাটের কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রেনযোগে আসত হাটুরেরা। পর্যায়ক্রমে রাস্তাঘাটের উন্নতি আর দূরত্ব কম হওয়ায় ধীরে ধীরে স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কালের আবর্তে রেলস্টেশনটি এখন একটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। রেলস্টেশন বলতে পাকিস্তান আমলের পাকা ঘরটি আছে। সেটি পরিণত হয়েছে পশুপাখির আবাসস্থলে। স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এখন নেশাখোরদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। রেল বিভাগ বলছে, স্টেশনটি এখনো বিলুপ্তি বা বন্ধ করা হয়নি। সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন বুকিং মাস্টার ও একজন পাহারাদার নিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে পাহারাদার অবসরে ও লোকবল কমের কারণে বুকিং মাস্টারকে অন্যত্র সাময়িক স্থানান্তর করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর