মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আশ্বিনেই পানিশূন্য তিস্তা

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

আশ্বিনেই পানিশূন্য তিস্তা

খরস্রোতা তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আশ্বিনেই খরস্রোতা তিস্তা নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। মরা তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে ধু-ধু চর। মানুষ হেঁটেই পার হচ্ছে তিস্তা। শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই তিস্তার এই বেহাল দশায় নদী-সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই যৌবন হারায় দেশের অন্যতম বৃহৎ এই নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ গড়ে ৬৫ হাজার কিউসেকের নিচে। যেখানে এ সময় পানি থাকার কথা প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার কিউসেক। সেখানে প্রতিদিনই কমছে তিস্তার পানি। আর উদ্বেগ বাড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। ভারতের গজলডোবায় প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারাজ নির্মাণ করে এ নদীর উচ্ছল দুর্বার গতিকে রোধ করে দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে তার বুক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে পানি নামের জীবন। মরে গেছে তিস্তা। এখন পাড়ে দাঁড়ালে বাতাসে শুনতে পাওয়া যায় ক্ষীণকায় তিস্তার গুমড়ে কান্নার শব্দ। দীর্ঘ এ তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই ধু-ধু বালুচর।

সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের সবই বন্ধ। ফলে যতটুকু পানি পাওয়া যায় তা ঘুরিয়ে পাঠানো হয় তিস্তার সেচ খালে। ফলে মূল নদী থাকে প্রায় পানিশূন্য। এবার আশ্বিনেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা। ব্যারাজের খানিকটা উজান ও ভাটিতে জেগেছে বিস্তীর্ণ চর। নদীতীরবর্তী এলাকার লোকজন বলছে, নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে দুই কূল উপচে বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। এতে ভেসে যায় বসতভিটা-ফসল। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় নদীতীরবর্তী এলাকায় সেচ সংকটের পাশাপাশি ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি মেলে না। এদিকে চরাঞ্চলের জমিতে আলুসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেও পানির অভাবে সেচ দিতে না পারায় কৃষকরা লোকসান গুনেন।

জানা গেছে, ভারত বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশে এই নদী শুকিয়ে এখন মৃতপ্রায়। বর্ষাকালে তিস্তায় মাসদুয়েক পানি থাকে মাত্র। আর বর্ষা শেষ হতে না হতেই পরিণত হয় মরা খালে। শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি আটকে রাখলেও বর্ষায় পানির ঢল সামলাতে খুলে দেওয়া হয় গজলডোবা ব্যারাজের সব জলকপাট। ফলে এ দেশে তিস্তার আশপাশের কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল হয়ে পড়ে বন্যাকবলিত। পানির তোড়ে ভেসে যায় ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি।

এ ব্যাপারে নদী গবেষক ও রিভারাইন পিপলসের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘অন্যান্য নদীর তুলনায় তিস্তা অত্যন্ত ভালো নদী। এখানে দখল-দূষণ তুলনামূলক কম। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে একতরফাভাবে ভারত পানি প্রত্যাহার করায় নদীটি দিন দিন মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নদীর পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদ লালমনিরহাটের সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলের প্রাণ তিস্তা নদী। অথচ সেই নদীটিই এখন প্রাণ হারাতে বসেছে। পানির ন্যায্য হিস্সার দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সরকারের পরিকল্পনায় থাকা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নও দ্রুত করা উচিত বলে মনে করছি।’

সর্বশেষ খবর