শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

দলে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ মাদক ব্যবসায়ীদের ঠাঁই হবে না

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলনে বললেন কেন্দ্রীয় নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দাগি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের দলে জায়গা না দিতে আবারও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের হুঁশিয়ার করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেছেন, যারা আদর্শবান, যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে দলে জায়গা দেওয়া যাবে না। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার একটি কমিউনিটি সেন্টারে দক্ষিণের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ নম্বর ইউনিট সম্মেলনে দলের সিনিয়র নেতারা এসব কথা বলেন।  এ ইউনিট সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ তাদের পূর্বঘোষিত ইউনিট সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করল। এখন ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য ইউনিটের সম্মেলন হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সংগীত ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে দ্বিতীয় অধিবেশনের সাবজেক্ট কমিটির সভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব ও সমর্থনে সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়। ২৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি সলিম উল্লাহ সলুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি সাদেক খান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা, মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি এম এ সাত্তার প্রমুখ। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন পরিচালনা করেন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন।

সম্মেলন উদ্বোধন করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজের লোক বাড়ানোর জন্য খারাপ লোকদের টেনে আনবেন না। খারাপ লোকেরা বসন্তের কোকিল। দুঃসময়ে হাজার পাওয়ারের বাতি দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুঃসময়ে খাঁটি ও ত্যাগীরাই মাঠে থাকবেন। ভালো মানুষ যত আওয়ামী লীগে আসবে আমরা তত শক্তিশালী হব। তিনি বলেন, কতগুলো অভিযোগ আসে। দাগি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এ ধরনের বিতর্কিত, অপকর্মকারীদের দলে আপনারা ঠাঁই দেবেন না।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যারা আদর্শবান, যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য বিসর্জন দিয়ে গেছেন, তাদের দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই দল শক্তিশালী হবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি থেকে যারা আসে, যুবদল থেকে যারা আসে তারা দলের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে। তিনি বলেন, আমি এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা, একজন ভোটার। মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভিতরে চাপা কান্না রয়েছে। সেই চাপা কান্না আপনাদের শুনতে হবে, বুঝতে হবে। আর সেই কান্না হলো আমরা যোগ্য জায়গায় সম্মানিত হইনি পূর্বে। আমি বিশ্বাস করতে চাই বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কেউ নিগৃহীত হবেন না।

ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, আওয়ামী লীগে যোগ্য ও ত্যাগী লোকদের জায়গা করে দিতে হবে। কোনো চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, অপরাধীকে জায়গা দেওয়া যাবে না। দুঃসময়ের কর্মীদের জায়গা দিতে হবে। কারণ তারাই থাকবেন। তিনি বলেন, ’৭৫ সালেও আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ছিলেন। কিন্তু সঠিক নির্দেশনা না থাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ একটি মিছিলও বের করতে পারেনি। কেউ বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দেননি। এখন খাঁটি কর্মী তৈরি করতে হবে। কেউ আঘাত করার চেষ্টা করলে যেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি।

তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকা মহানগরে দুটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে দেখেছি যে, একটি নির্বাচনী এলাকায় গত ১৮ বছর ধরে সর্বসাকল্যে ৩২ জন নেতার দলের পদ-পদবি আছে। আর কোনো নেতার পদ নেই। সেই কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় সম্মেলন ছাড়া কমিটি গঠনের যে রেওয়াজ, সেই রেওয়াজ থেকে বাইরে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।

মির্জা আজম বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সাংগঠনিক জেলা ঢাকা মহানগর উত্তর হলেও সবচেয়ে দুর্বল। এখানে নিজস্ব কোনো অফিস নেই। যেখানে আটটি সংসদীয় এলাকা, সেখানে দলীয় অফিস থাকবে না- এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরে ১ হাজার ৪০০ ইউনিট আছে। এর প্রত্যেকটির সম্মেলন হলে ঢাকা মহানগর উত্তরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠনে রূপ নেবে। ফলে প্রায় ৫৬ হাজার তৃণমূল নেতা পদ-পদবি পাবেন। যে কর্মীদের কোনো পদ-পরিচয় ছিল না। যদি আওয়ামী লীগের ৫৬ হাজার হয় অন্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে ১০টির মতো। তারা যদি একইভাবে ইউনিট কমিটি করে সংগঠন গোছায় তাহলে আগামীতে এই ঢাকা মহানগরেই ৫ লাখ নেতা আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারী থাকবেন।

দায়িত্ব পেলেন যারা : দ্বিতীয় অধিবেশনের সাবজেক্ট কমিটির সভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব ও সমর্থনে সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়। এতে ৪ নম্বর ইউনিটে নুরুল ইসলাম সভাপতি, রিপন হোসেন সাধারণ সম্পাদক, ৫ নম্বরে আসলাম মিয়া সভাপতি, আমান উদ্দিন আশরাফ সাধারণ সম্পাদক, ৬ নম্বরে গোলাম রাব্বানী বাবুল সভাপতি, মো. শাহাজাদা সাধারণ সম্পাদক, ৭ নম্বরে আওলাদ হোসেন সভাপতি, তরিকুল ইসলাম মামুন সাধারণ সম্পাদক, ৮ নম্বরে মাইনুদ্দিন আহমেদ দুলাল সভাপতি, ফারুক হোসেন সবুজ সহসভাপতি, দেলোয়ার হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ খবর