শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

একই আঙিনায় মন্দির মসজিদ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

একই আঙিনায় মন্দির মসজিদ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন বহন করছে লালমনিরহাটে একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ, যার অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে। এমনই একটি দর্শনীয় স্থান জেলা শহরের পুরান বাজার এলাকায় অবস্থিত পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির। একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দিরে নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। হানাহানি ও মতবিরোধ ছাড়াই যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় আচার পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষ। প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এটি দেখতে আসে অনেক মানুষ। জানা যায়, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন বহন করছে লালমনিরহাট শহরের এই শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির। এ দুটি স্থাপনা নির্মাণের কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও জনশ্রুতি রয়েছে, ১৮৩৬ সালে দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সেই সুবাদে পুরান বাজার এলাকা অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে। অন্যদিকে ১৯০০ সালে এখানে একটি নামাজঘর নির্মিত হয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই নামাজঘরই পরে পুরান বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। মসজিদ-মন্দিরসংলগ্ন খোলা জায়গাটিতে পূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মেলা বসে, কিন্তু করোনার কারণে এবার মেলা বসছে না। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই জায়গায় ওয়াজ মাহফিল ও জানাজা সম্পন্ন করে থাকে। ময়মনসিংহ থেকে আগত মুক্তা বেগম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, একটি টেলিভিশনের লাইভে দেখেছি মসজিদ-মন্দির এক জায়গায়। টিভিতে দেখার পর ইচ্ছে ছিল দেখার। তাই পরিবারসহ দেখলাম। খুব ভালো লাগল। একই জায়গায় দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। যে যার ধর্ম পালন করছে। বাংলাদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, তার অনন্য দৃষ্টান্ত এটি। কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি ও পুরোহিত শ্রীশঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নেওয়া হয় কখন এবং কীভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে। এরই অংশ হিসেবে নামাজের সময়গুলোতে মন্দিরে বন্ধ থাকে ঢাকের বাদ্য বাজনা। পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলাল উদ্দিন জানান, পাশাপাশি মন্দির থাকায় কোনো সমস্যা নেই এবং মিলেমিশে যে যার মতো ধর্ম পালন করছে। জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর জানান, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে একই স্থানে মন্দির-মসজিদের অবস্থান। এখানে যে যার ধর্ম পালন করছেন। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য নিদর্শন এবং দর্শনীয় স্থান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর