শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
চট্টগ্রামে মিতু হত্যা

নিজের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি বাবুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় নিজের করা মামলায় দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করেছেন। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে আবেদনটি করা হয়। অন্যদিকে, মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় এহতেশামুল হক ভোলার জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে আসামির  পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে। বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, বাবুল আক্তারের নারাজি আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছে। আগামী ২৭ অক্টোবর বাদীর উপস্থিতিতে আবেদনের শুনানি হবে। তিনি বলেন, বাবুলের করা মামলায় ৫১ জনের বেশি সাক্ষীর ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। কোনো সাক্ষী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি, কোনো বক্তব্য দেননি। দুজন সাক্ষী, যাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সাড়ে চার বছর পর ওই দুজনকে ধরে এনে তার (বাবুলের) বন্ধু বানালেন। তারা বলেছে, বাবুল আক্তার ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা লেনদেন করেছেন। এটার ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেন। কাদের বাঁচানোর জন্য, সেটা আমাদের দেখতে হবে।

জানা যায়, গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। পরদিন ১২ মে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই মিতু হত্যার সঙ্গে তার স্বামী বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পেয়েছে বলে জানানো হয়। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের পর পরই চট্টগ্রামে বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় সেদিন জমা দিয়েছিলেন পিবিআইর পরিদর্শক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সন্তোষ কুমার  চাকমা। এরপর ওই দিনই পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন একটি হত্যা মামলা করেন। যাতে বাবুলকে প্রধান আসামিসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। গত ২৩ আগস্ট বাবুল আক্তারের করা ওই মামলাটিতে বিভিন্ন সময়ে আসামিদের দেওয়া ১৬১ ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদনের নকলের (কপি) জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার জাহানের আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। বাবুলের পক্ষে করা সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবং ১৬১ ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দিগুলোর নকল সরবরাহের আদেশ দেয়। একই দিন বাবুলের করা মামলার নথিপত্র বিচারিক হেফাজতে রাখতে তার আইনজীবীর করা আবেদনও মঞ্জুর করে আদালত। বাবুল ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে শাক্কু, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু। এদিকে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় এহতেশামুল হক ভোলার জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে আসামির পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। 

এর আগে আলোচিত এ মামলায় হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন এহতেশামুল হক ভোলা। পরে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাই কোর্ট বেঞ্চ ভোলাকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়। একই সঙ্গে জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভোলা আত্মসমর্পণ না করে সময়ের আবেদন করেন। আমরা এর বিরোধিতা করি। ভোলা হাই কোর্টের নির্দেশনা পালন না করায় আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে। হত্যাকান্ডের পর নগরের পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয়ে কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়, যার বাদী ছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার নিজেই। তবে ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। কিন্তু পরদিন ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলকে পিবিআই হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

সর্বশেষ খবর