শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

সামাজিক অস্থিরতায় বাড়ছে খুনোখুনি

পারিবারিক সহিংসতার কারণ এখন শুধু যৌতুক বা পরকীয়াতেই সীমাবদ্ধ নয় এই অস্থিরতা একটা বড় সময় ধরে মানুষকে বহন করতে হবে বলে আশঙ্কা

জিন্নাতুন নূর

সামাজিক অস্থিরতায় বাড়ছে খুনোখুনি

করোনা মহামারীতে একদিকে যেমন মানুষ কঠিন সময় পার  করছে অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপে বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতাও। মহামারীর আগেও পারিবারিক সহিংসতায় বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এটি তখন এতটা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যতটা না এখন পৌঁছেছে। গত কয়েক দিনের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দাম্পত্য কলহের জেরে সন্তানের সামনেই মা-বাবা আত্মহত্যা করছেন। কখনো কোলের শিশুকে নিয়েই আত্মহত্যা করছেন জন্মদাত্রী মা। পরকীয়ার সন্দেহ বা কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী একজন অপরজনকে হত্যা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলো যৌতুক বা পরকীয়া সম্পর্কের কারণে ঘটলেও এর ব্যাপ্তি বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা একটা বড় সময় ধরে মানুষকে বহন করতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮০ জন নারী স্বামীর অত্যাচারে মৃত্যুবরণ করেন। শুধু যৌতুকের কারণেই ৯৮ জন নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি      থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ১৫ শিশুকে তাদের অভিভাবক হত্যা করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সন্তানরাও এখন তাদের কর্মজীবী মা-বাবার কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায়ও খুব নেতিবাচক খবর প্রচার হচ্ছে। যা মানুষকে অপরাধপ্রবণ হওয়ার জন্য উসকে দিচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষকে তার সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করতে হবে। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের নাড়াদিঘি গ্রামে স্ত্রী রুখসানাকে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ করেন হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। পুলিশ জানায়, হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীর ঝগড়ার একপর্যায়ে তিনি শাবল দিয়ে রুখসানার মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই রুখসানার মৃত্যু হয়। পরে থানায় গিয়ে পুলিশকে হাবিবুর বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছি, লাশ নিয়ে আসেন।’ প্রতিবেশীরা জানান, তিন মেয়ে ও দুই সন্তানের জনক এই দাম্পতির সংসার ভালোই কাটছিল। কিন্তু কি কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি। নেত্রকোনার হাওর উপজেলা মদনের তিয়শ্রী ইউনিয়নের বালালি গ্রামে নান্দু মীর ও স্ত্রী হিমা আক্তার মেরাজ্রু দাম্পত্য কলহ প্রায় লেগেই থাকত। পুলিশ ধারণা করছে সম্প্রতি নান্দু মীর নিজে তার স্ত্রীকে শাবল দিয়ে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজেও আত্মহত্যা করেন। ১২ অক্টোবর সকালে এই দম্পতির দুই সন্তান ঘুম থেকে ওঠে বাবার লাশটি ঘরের আড়ায় ঝুলতে এবং মায়ের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। গত ১২ অক্টোবর শার্শা উপজেলার জামাইয়ের বঁটির কোপে মুসা বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি মারা যান। উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ জন্য পুলিশ জামাই তুহিন, বিয়াই কুদ্দুস ও জামির নামে তিনজনকে আটক করেছে। মুসা বিশ্বাসের মেয়ের সঙ্গে তুহিনের বিচ্ছেদ হয়েছে দুই মাস আগে। কিন্তু তুহিন তার সন্তানকে আনতে  গেলে মুসার সঙ্গে তার জামাইয়ের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তুহিন ও তার বাবা এবং ভাইয়েরা লাঠি ও বঁটি দিয়ে মুসার ওপর হামলা চালায়। এলাকাবাসী মুসাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মুসাকে মৃত ঘোষণা করেন। চট্টগ্রামে নুরজাহান আকতার তার দুই মাস বয়সী শিশুকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টার জন্য স্বামী আরফাতুল ইসলাম মোর্শেদের নামে মামলা করেন। জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই নুরজাহানকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতে থাকেন মোর্শেদ ও তার পরিবারের লোকজন। গর্ভবতী হওয়ার পরও যৌতুকের দাবিতে সন্তান নষ্ট করতে চান মোর্শেদ। ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সে যাত্রায় গর্ভের সন্তানকে রক্ষা করলেও এরপরও স্ত্রীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করেননি মোর্শেদ। এ জন্য সম্প্রতি বাধ্য হয়েই নুরজাহান মামলাটি করেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে নাদিরা খাতুন নামের এক নারী আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার শ্রীপুরের কাটাপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর সপ্তাহখানেক আগে পঞ্চগড়েও কোলের শিশুকে নিয়ে ট্রেনের নিচে আরেক গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় আহত অবস্থায় শিশুসহ সেই গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে ঝগড়ার পরই এই নারী ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। পরে ট্রেনচালক ট্রেনটি থামাতে সক্ষত হলেও ট্রেনের ধাক্কায় মা-মেয়ে গুরুতর আহত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ইকবাল হোসেন তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রীর মধ্যে টক দই পরিবেশন করাকে কেন্দ্র করে কনেপক্ষের লোকজনের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। পরদিন স্থানীয় বাজারে গেলে ইকবাল হোসেনের সঙ্গে বরপক্ষের ৫-৬ জন যুবক দইয়ের বিষয় নিয়ে তর্ক করেন। একপর্যায়ে সেই যুবকরা ইকবাল হোসেনকে বেধড়ক মারধর করেন। এই ঘটনায় ইকবালের মৃত্যু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর