শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হলো দুর্গাপূজা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হলো দুর্গাপূজা

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হয় বিসর্জন। একদিকে বিদায়ের বেদনা অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা। করোনা থেকে মুক্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ সব ধরনের মঙ্গল কামনা ও অশুভকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। প্রতিমা ঘাটে নেওয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপ-ধুনো নিয়ে আরতি করেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়।

রাজধানীতে দুপুরের পর থেকেই বিসর্জনের জন্য প্রতিমাগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রতিমাগুলো নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে। তারপর মঙ্গলধ্বনি, উলুধ্বনি, শাঁখ আর ঢাকের ধ্বনিতে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় বুড়িগঙ্গায়। আবারও মঙ্গলবার্তা নিয়ে আগামী বছর যেন মা দুর্গা আগমন করেন বিসর্জনকালে সেই প্রার্থনা করেন ভক্তরা। রাজধানীতে বুড়িগঙ্গা নদী, তুরাগ নদ ছাড়াও বিভিন্ন জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বিকালে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে শাহজাহানপুর থেকে আসা বাংলাদেশ রেলওয়ে পূজা কমিটির প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর আসে অন্যান্য পূজামন্ডপের প্রতিমা। করোনা সংক্রমণের কারণে এবার প্রচলিত শারদীয় ‘দুর্গোৎসব’কে শুধু ‘দুর্গাপূজা’র মধ্যেই সীমিত রাখেন আয়োজকরা। বিসর্জনের আয়োজনের সঙ্গে আসা শাঁখারী বাজারের বাসিন্দা প্রদীপ কুমার বলেন, মা দেবী দুর্গা যেন সবাইকে ভালো রাখেন। তিনি যেন পুরো পৃথিবীকে ভালো রাখেন। অশুভ শক্তির বিনাশ করেন। করোনামুক্ত পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে চাই আমরা। পাশাপাশি তিনি যেন দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করেন, এটাই আমাদের প্রার্থনা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি জানান, বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। চলে রাত পর্যন্ত। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সব ধর্মাবলম্বী মিলেমিশে বাস করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বসুন্ধরায় প্রতিমা বিসর্জন : রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পি ব্লকের পূজামন্ডপের প্রতিমা বিকাল ৩টার দিকে অনাড়ম্বর পরিবেশে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বসুন্ধরা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পবিত্র সরকার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে ভাঙচুরের প্রতিবাদে প্রতিমা বিসর্জন ছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা করা হয়নি। সিঁদুরবরণসহ অন্য কোনো কর্মসূচিও পালন করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা সবার মঙ্গল কামনা করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে বন্ধন দেশে রয়েছে সেটি অটুট থাকুক। বিভিন্ন স্থানে যেসব অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি যেন আর না ঘটে। হিন্দু-মুসলিম সবাই যেন দেশে মিলে-মিশে থাকতে পারি। ধূপ-ধুনুচি, পঞ্চপ্রদীপ আর ঢাকের বাদ্যে গত সোমবার সন্ধ্যায় আসনে অধিষ্ঠিত হন দেবী দুর্গা। বোধনের ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। শিশির ধোয়া শারদ প্রভাতে বেজেছিল দেবীর আগমনী সুর। ধর্মীয় রীতিনীতি ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে পূজামন্ডপে আয়োজন করা হয় পূজার। মহামারীর কারণে গত বছরের মতো এ বছরও রামকৃষ্ণ মিশন মঠে আয়োজন হয়নি কুমারী পূজা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, এ বছর রাজধানীতে ২৩৮টি ও সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৭টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর