রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

শিল্পকলায় জমজমাট সাধুসঙ্গ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

শিল্পকলায় জমজমাট সাধুসঙ্গ

জাতীয় জাদুঘরের বিশ্বসভ্যতা গ্যালারিতে নতুন রূপে চালু হলো ‘সুইজারল্যান্ড কর্নার’। এ কর্নারটিতে থাকবে সুইজারল্যান্ডের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা সমাহার। সুইস আইকনিক ভূদৃশ্য, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া, রন্ধন ঐতিহ্য, নকশার ঐতিহ্য, সুইস টেক্সটাইল শিল্প, সুইজারল্যান্ডের অনুপ্রেরণা, গরুর ঘণ্টা বাজানো, সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ, সুইস ভাষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের শতাধিক সংগ্রহ রয়েছে এই কর্নারে। ঢাকার সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের আয়োজনে ও জাদুঘরের সহযোগিতায় গতকাল এই কর্নারটির উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ও বেসরকারি সংগঠন ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ড চমৎকার, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ। এটি কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় না ও কোনো সামরিক জোটেরও সদস্য নয়। বাংলাদেশও সে রকম একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ দেশ। আশা করছি, দুই দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত আরও প্রশস্ত হবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাঙালি জাতির ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও শিল্পকলার ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে আসছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এ দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের সচিব গাজী ওয়ালিউল হক, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলামসহ সুইজারল্যান্ড দূতাবাস ও জাতীয় জাদুঘরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জাদুঘরের বিশ্বসভ্যতা গ্যালারিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও সুইজারল্যান্ড এই ৪টি দেশের কর্নার রয়েছে। সুইজারল্যান্ড কর্নারটি ২০০৬ সালে স্থাপনের পর নতুন কয়েকটি নিদর্শন যুক্ত করার মাধ্যমে এটিকে বর্তমানে নতুন রূপে সাজানো হলো।

বঙ্গবন্ধু লোকশিল্প প্রদর্শনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে শুরু হলো ‘বঙ্গবন্ধু লোকশিল্প প্রদর্শনী’ শিরোনামের ১০ দিনের প্রদর্শনী।

জাদুঘরের জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা বিভাগের উদ্যোগে গতকাল প্রতিষ্ঠানটির নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে শুরু হয় এই প্রদর্শনী। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড।

পাটশিল্প, সূচিশিল্প, ফোক পেইন্ট, টেরাকোটা ও মাটি, রিকশা পেইন্টিং, নকশিকাঁথা, পাটিশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প, ধাতবশিল্প, শোলাশিল্প, সিনেমা ব্যানার, কাঠের শিল্পের নানা কর্ম তুলে ধরা হয়েছে।

২৬ অক্টোবর শেষ হবে ১০ দিনের এই প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘লোকগানে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে লোকগান পরিবেশন করেন আবদুল কুদ্দুস বয়াতি, শিল্পী শাহানাজ বাবু, বাউল গরীব মোক্তার এবং শিল্পী পূর্ণ চন্দ্র রায়।

শিল্পকলায় সাধুসঙ্গ : মেঘযুক্ত আকাশের সূর্যটা ডোবার পরেই ভাবের সাগরে ডুব দিল সাঁইজির ভক্তরা। লালনের তাত্তি¡ক কথার আর অনন্য সুরে তন্ত্রমুগ্ধের মতো তন্ময় হয়ে সুরের বৃষ্টিতে ভিজে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আগত লালনপ্রেমীরা। শ্বেতবসনের সাজে হাতে একতারা উঁচিয়ে সাঁইজির ভাববাণীতে শারদীয় সন্ধ্যাকে উপভোগ্য করে তোলেন বাউলরা। এমন চিত্রই ছিল লালনের ১৩১তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে সাঁইজি স্মরণ উৎসব ও সাধুমেলায়।

শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে গতকাল সন্ধ্যায় শুরু হয় এই আয়োজন।

সুরের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ভাবের জগতে দুলতে থাকেন শ্রোতারা। আর সুরের বৃষ্টি চলার মধ্যেই মন খারাপ করে শরতের অনাকাক্সিক্ষত বৃষ্টি ভাগড়া দেয় অনুষ্ঠানস্থলে। যার কারণে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠান নিয়ে যাওয়া হয় চিত্রশালা মিলনায়তনে।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া, পাগলা বাবলু, নাসরিন আক্তার বিউটি, কহিনুর আক্তার গোলাপী, শফি মন্ডল প্রমুখ।

জাত গেল জাত গেল বলে, এসো হে এসো দয়াল, আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে, যদি তরীতে বাসনা থাকে, মদিনায় রাসুল নামে কে এলোরে ভাই, এমন সমাজ কবেগো সৃজন হবে, কবে সাধুর চরণ ধূলি মোর লাগবে গায়, দেখনা রে সব হাওয়ার খেলা, তোমার দয়া বিনে চরণ সাধবো কিমতে, গুরু গত না হইলে প্রেমের প্রেমিক না হলে, মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই, ভজ মুরশিদের চরণেই বেলাসহ ইত্যাদি গানে গানে বাউলরা সুরের চাদরে দিয়ে ঢেকে দেন শিল্পকলা একাডেমিকে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান। লালন গবেষণায় সম্মাননা স্মারক পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. শক্তিনাথ ঝা (ভারত)। লালন সাধনায় সম্মাননা পেয়েছেন পার্বতী দাস বাউল (ভারত), ফকির মোহাম্মদ আলীশাহ (কুষ্টিয়া), ফকির আজমল শাহ্ (ফরিদপুর), নিজাম উদ্দিন লালনী (মাগুরা), শুরুবালা রায় (ঠাকুরগাঁও)। সাঁঝ বেলায় শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই আসর।

সর্বশেষ খবর