বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আসছে

মানিক মুনতাসির

অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আসছে

করোনাভাইরাসের অভিঘাতে সৃষ্টি হওয়া অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজনে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শ্রেণিভুক্ত জেলাভিত্তিক হতদরিদ্রদের তহবিলে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার, যা দিয়ে দেশের সবগুলো জেলার হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজনমূলক প্রকল্প নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল দুর্যোগ ব্যবস্থানা বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে হতদরিদ্রদের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এ জন্য চলতি ২০২১-২২ বাজেটের সংশ্লিষ্ট খাতে আরও ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়াতে হবে, যা সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় করা হবে।

সূত্র জানায়, ১৪ অক্টোবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব জেলায় অতি দরিদ্রের হার ৩০ শতাংশের ওপরে আছে শুধু সেসব জেলায় কর্মসৃজন প্রকল্প না নিয়ে সবগুলো জেলাতেই এ প্রকল্প বিস্তৃত করা উচিত। কেননা করোনার অভিঘাতে প্রায় সবগুলো জেলাতেই হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১৬টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে আরও ২৭৬টি উপজেলার বিপুলসংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। যাতে করে তারা আরও বেশি মাত্রার দারিদ্র্যের কশাঘাতে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, করোনার কারণে এক বছরের ব্যবধানে দেশে অতি দরিদ্রের হার ২২ থেকে ৪০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ফলে বিপুলসংখ্যক এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরকারি আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে কর্মসৃজনের আওতায় আনা জরুরি। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে দেশের হতদরিদ্রের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আগের মধ্যবিত্তকে আমরা কোনোভাবেই ফিরে পাব না। বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে গেছে। এ ছাড়া প্রজন্মের পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোকে শুধু অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করলে চলবে না। এখানে রাজনৈতিক ইস্যুটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। এরপর সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, শিক্ষগত যোগ্যতা ইত্যাদি। করোনার কারণে মধ্যবিত্ত সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্ত এটাও ঠিক। তবে নিম্নবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসছে না। এলেও তারা রাতারাতি উচ্চবিত্ত হয়ে যাচ্ছে। আর যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা কোথা থেকে আসছেন তা বলাটাও কঠিন। ফলে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আবার পুঁজিবাদী অর্থনীতির কারণে মধ্যবিত্তরাও কোণঠাসা। তারা একটা বাজারে পরিণত হয়েছেন। বৈশ্বিক ভোক্তাশ্রেণিতে যারা মধ্যবিত্ত তারাও আজ প্রকট সংকটে আছেন। অথচ আগের কালে সারা পৃথিবীতে মধ্যবিত্তরাই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নেতৃত্ব দিয়ে আসতেন। আজকে তা বিলীন হয়ে গেছে।’ এই শ্রেণির মানুষদের জন্য কর্মসৃজনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি। ৯ অক্টোবর পিপিআরসির এক অনুষ্ঠানে এ মতামত তুলে ধরেন ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সূত্র জানায়, এর আগে করোনার আঘাত মোকাবিলায় প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (ইজিপিপি) আওতায় নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ অর্থ ও অন্যান্য বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় এখন বরাদ্দ বাড়িয়ে কর্মসৃজন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। করোনার প্রভাবে লকডাউন ও সাধারণ ছুটির সময় সারা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়।

 সে সময় অর্থনীতির প্রধান খাতগুলো- যেমন ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলো মহামারীর কারণে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে সময় সরকার কতগুলো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে। ওই সব প্রণোদনা প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্রদের নগদ সহায়তাও দেওয়া হয়। কিন্তু এখন তাদের জন্য নগদ সহায়তার পরিবর্তে কর্মসংস্থানমূলক কাজের কথা ভাবছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মধ্যবিত্তরা কোথায় গেলেন? করোনার ধাক্কায় তারা হারিয়ে গেছেন। অর্র্থনৈতিক সক্ষমতা, সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাক্ষেত্র সবখানেই তারা বঞ্চিত। তাদের বেশির ভাগই এখন হতদরিদ্রের কাতারে নেমে গেছেন।’ তাদের কর্মসংস্থানের জন্য পৃথক প্রকল্প নেওয়া খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর