শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ

গোলাম রাব্বানী

ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। এ ধাপের ভোট হবে ১১ নভেম্বর। এ ছাড়া তৃতীয় ধাপের ইউপি ভোটের মনোয়নপত্র দাখিল চলছে। আগামী ২ নভেম্বর এ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হবে। ৪ নভেম্বর যাচাই বাছাই হবে এবং ১১ নভেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে। এ ধাপের ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। এই দুই ধাপের নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক চলছে। মিলিছ-শোডাউন নিষিদ্ধ থাকলেও দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে মিছিল-শোডাউন করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন ইউপিতে। তৃতীয় ধাপের সম্ভাব্য প্রার্থী ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার-লিফলেট দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসি নির্দেশনা দিয়েছে আগামী ২ নভেম্বরের মধ্যে পোস্টার-দেয়াল লিখনসহ অন্যান্য নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী সরিয়ে নিতে হবে। তবে সেই নির্দেশনা কেউ মানছে না। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখেও দেখাছে না। অভিযোগ উঠেছে- স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পোস্টার গ্রামগঞ্জে টাঙাতে দেওয়া হচ্ছে না। আবারও কোনো প্রার্থী পোস্টার টাঙালেও তা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এদিকে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জাল স্বাক্ষর দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যারের অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়ে কোনো কাজ হয়নি। গত ১৪ অক্টোবর ইসির এক পরিপত্রে বলা হয়েছে- দেশব্যাপী ১০০৭ ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের নিজ দায়িত্বে পোস্টার, দেয়াল লিখনসহ অন্যান্য নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী আগামী ২ নভেম্বরের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া ২ নভেম্বরের পরে কোনো এলাকায় প্রার্থীদের নামে পোস্টার, দেয়াল লিখন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাদের ছবি তুলে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি। একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরে।       তবে সেই নির্দেশনাও কেউ আমলে নেয়নি। এমনকি ইসি কর্মকর্তারাও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কোনো    প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক : ঢাকার ধামরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে  প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। আর প্রচারণার প্রথম দিনেই চার ইউনিয়নে গুলি ছোড়া, মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। বুধবার দুপুরের দিকে প্রতীক বরাদ্দের পর বিকালেই গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে রোয়াইল ইউনিয়নে। বিকালের দিকে বালিয়া ইউনিয়নে মুখোমুখি দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজনের হাত ভেঙে যায়। এ ছাড়া সন্ধ্যার পরপর সোমভাগ ইউনিয়নে মারধরের শিকার হন প্রার্থীসহ চারজন। সন্ধ্যার দিকে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে পোস্টার লাগাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আরেকজন। এসব ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, লুটপাট ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।  নারায়ণগঞ্জের তিন উপজেলায় বিভিন্ন ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন অনেক প্রার্থী।

জাল স্বাক্ষরে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার : আমরা যখন জানতে পারি জাল স্বাক্ষর দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ছুটে যাই। আমরা আবেদনে করা স্বাক্ষর দেখতে চাই, কিন্তু দেখানো হয়নি। এর বিরুদ্ধে আবেদন দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আবেদন রাখেননি। আমরা এখন নিরুপায়। এই কথাগুলো সাংবাদিকদের বলছিলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্যপ্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম। ওই ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের সদস্য ও তিনটি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করার অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের লোকদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ এই কান্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ।

সর্বশেষ খবর