ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাকালে বা করোনা-উত্তর সময়ে পারিবারিক কলহ, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, এই সময়ে বেশকিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক জীবন থেকে মানুষ অস্বাভাবিক জীবনে চলে গেছে।
তিনি বলেন, করোনার সময়ে মানুষ এক ধরনের বন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করেছে। মানুষের যে স্বাভাবিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া তা থেকে অস্বাভাবিক ধরনের জীবনে চলে গিয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়। তখন উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং প্রান্তিক মানুষসহ সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী সবাই এক ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় বা সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। বড় বড় ব্যবসায়ীর পুঁজিতে ধস নামে। ছোট ব্যবসায়ীদের অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আর এটি বহন করাটাও ছিল বেশ কষ্টকর। তিনি বলেন, করোনাকালে বন্দী অবস্থায় জীবন কাটানোয় মানসিক চাপ তৈরি হয়। এর থেকেও বড় কথা হচ্ছে, মানুষের মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যায়, এই বুঝি করোনার আক্রমণ হবে। অর্থাৎ সংকট, আতঙ্ক এবং গন্ডিবদ্ধ জীবন-এসব মিলে মানুষের মনস্তত্ত্বে বিশাল ঝড় বয়ে গেছে। এ সময় অনেক কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়। এই বহুমুখী সংকট মেনে নেওয়ার মতো মনস্তত্ত্ব খুব কম মানুষের আছে। আর এসব কিছুর প্রভাব পারিবারিক জীবনে পড়ে। এর ফলে স্বামী বা স্ত্রী চাকরি হারা হয়েছেন। স্কুল বন্ধ থাকায় বিপথগামী হয়েছে শিশুরা। বহু শিশু মোবাইলে আসক্ত হয়ে গেছে। স্কুল থেকে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এসবের জন্য ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে এক ধরনের দাম্ভিকতা, এক ধরনের কলহসহ ভবিষ্যতের জীবিকা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে দাম্পত্য কলহ, সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার জন্য সন্তানদের অবৈধ পথে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।