সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভার্চুয়াল আদালতই বড় অর্জন

বিচার বিভাগ পৃথককরণের ১৪ বছর

আরাফাত মুন্না

ভার্চুয়াল আদালতই বড় অর্জন

আজ ১ নভেম্বর। ১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে বিচার বিভাগ পৃথককরণের। সুপ্রিম কোর্টের এক রায় অনুযায়ী ২০০৭ সালের এই দিনে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয় বিচার বিভাগকে। ওই রায়ে বিচার বিভাগ পৃথককরণের লক্ষ্য পূরণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ১২ দফা নির্দেশনা দেয়, যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে এই সময়ে। ৩০১ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়ে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও বর্তমানে বিচারক সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৯০০। বৃদ্ধি পেয়েছে আদালত সংখ্যা এবং এজলাসও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে হঠাৎ করেই ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থায় প্রবেশ করাই বিচার বিভাগের বড় অর্জন। তবে বিচারক-এজলাস বৃদ্ধিসহ বিচার বিভাগে নানা সুযোগ-সুবিধা যুক্ত হওয়ার পরও মামলাজট না কমায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা-সংক্রান্ত মাসদার হোসেন বনাম সরকার মামলার যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করে। রায়ে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে ৩০১ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। পৃথককরণের সময় দেশের সব আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ লাখ।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও এই মামলাজটকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা হলো এজলাস সংকট। এজলাস স্বল্পতা দূর করে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজে গতিশীলতা আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সরকার মামলা ব্যবস্থাপনার দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর থেকে এই সময়ে বিচার বিভাগের অন্যতম বড় অর্জন হিসেবে ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থাকেই সামনে রাখতে চান। তিনি বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে যখন দেশে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হলো, তখন যদি ভার্চুয়াল আদালত শুরু করা না যেত, তাহলে বিচার প্রার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়তেন।

গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ প্রবেশ করে ভার্চুয়াল বিচারব্যবস্থায়। প্রথমে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ এবং পরে এই অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করে সরকার। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১১ মে থেকে চলতি বছর ১০ আগস্ট পর্যন্ত দুই ধাপে শুধু অধস্তন আদালতেই ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৮টি মামলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৭ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। জামিন আদেশের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কারাগার থেকে মুক্তিও পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২০২০ সালের ১১ মে থেকে ওই বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৫৮ কার্যদিবসে ভার্চুয়াল শুনানি নিয়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯টি মামলায় ৭২ হাজার ২২৯ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় দফায় চলতি বছর ১২ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার ২১৯টি মামলায় ৮৮ হাজার ৫৩৮ জনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই সময়ে ২ হাজার ২৬১ শিশুকেও জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৪ বছর আগে যে বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছিল, সেই একই সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। মামলাজট যেন কমানোই যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মামলাজট কমাতে হলে সবার আগে আপসযোগ্য বিরোধগুলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। ফৌজদারি মামলায় সাক্ষী শুরু হলে মুলতবি ছাড়া শুনানি করতে হবে। ভার্চুয়াল আদালতের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এটি অবশ্যই বড় একটি অর্জন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মামলাজট আমাদের বড় একটি সমস্যা। এই মামলাজট কমাতে হলে আরও বেশিসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি মামলা দায়েরও রোধ করতে হবে। বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে বিকল্প পদ্ধতিতে।’

সর্বশেষ খবর