সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
দস্যুমুক্ত ঘোষণার তিন বছর

সুন্দরবনের দস্যুদের দেওয়া হচ্ছে বাড়িসহ নানা উপহার

নিজস্ব প্রতিবেদক ও বাগেরহাট প্রতিনিধি

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণার তিন বছরপূর্তি আজ। একসময় যে সুন্দরবনে ছিল ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও হত্যার ভয়ংকর রাজত্ব এখন সেখানে বইছে শান্তির সুবাতাস। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত ৪২৬টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। আত্মসমর্পণ করা সেই কুখ্যাত দস্যু ও তাদের পরিবারকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এবং সুন্দরবনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

দস্যুরা আত্মসমর্পণ করলেও সুন্দরবনে এখনো কিছু দস্যু ও  চোরা  শিকারি রয়ে গেছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাব। সে লক্ষ্যে দুবলার চর ও মুন্সীগঞ্জে দুটি ক্যাম্প স্থাপন করে নিয়মিত টহল দিচ্ছে সংস্থাটি। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণা দিবস উপলক্ষে র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আত্মসমর্পণ করে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে তাদের যারা আবারো বিপথে নেওয়া অপচেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে র‌্যাব। আত্মসমর্পণ করা অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের সন্তান স্কুলে গেলে বাবার পরিচয় দিতে পারত না। কিন্তু আত্মসমর্পণের পর তারা আজ বুক ফুলিয়ে বলতে পারছে বাবা কি করেন। লজ্জিত হওয়ার মতো আর কিছু  নেই।

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়ানো জেলে বাওয়ালিদের কাছে এক সময়ের মূর্তিমান আতংক র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা বনদস্যুদের দেওয়া হচ্ছে বাড়ি ও নৌকাসহ নানা উপকরণ। আজ সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে এসব উপকরণ তুলে দেবেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ৩২৬ বনদস্যুর মধ্যে প্রয়োজনের ভিত্তিতে ১০২ জনকে বসতঘর, ৯০টি দোকানঘর, প্রয়োজনীয় জালসহ ১২টি নৌকা, ৮টি মাছের ট্রলার ও ৮৮টি গবাদি পশু দেওয়া হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিন, নিউজ টোয়েন্টিফোর ও যমুনা টেলিভিশনের মাধ্যমে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অস্ত্র জমা দিয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সমঝোতায় আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন সুন্দরবনের ৩২৬ বনদস্যু। এরপর থেকে সরকার ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে। এবার এসব বনদস্যুকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছে র‌্যাব। এরই অংশ হিসেবে তাদের বসতঘর, দোকানঘর, নৌকা, জাল, ট্রলার ও গবাদি পশু দেবে বিশেষ এই এলিট বাহিনীটি।

অনুষ্ঠানে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা বনদস্যু কাদের মাস্টার বাহিনী প্রধান আবদুল কাদের মাস্টার, আবদুল বারেক তালুকদার শান্ত, মো. রিপন ও মাওলা ফকির বলেন, আমরা খুবই খুশি হয়েছি। র‌্যাবের দেওয়া ঘরে থাকতে পারব। এখন আর বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না। গরু ছাগল পালন করে আয়ও করা যাবে।

সর্বশেষ খবর