বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দায়ী সিডিএ, দায় এড়াতে পারে না চসিকও

চট্টগ্রামে নালায় নিখোঁজের তদন্ত প্রতিবেদন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৫০) নিখোঁজের ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে নগর উন্নয়নে প্রধান সেবা সংস্থা হিসেবে অবহেলার কারণে দায় এড়াতে পারে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও (চসিক)। ব্যবসায়ী নিখোঁজের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ দুই সেবা সংস্থাকে অভিযুক্ত করা হয়। গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তদন্ত প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর কথা ছিল।

জানা যায়, গত গত ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুরে খোলা নালায় পানির স্রোতে তলিয়ে যান ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। এরপর গত ২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে সাত সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয় ব্যবসায়ী, দোকানদার, নিখোঁজ ব্যবসায়ীর সন্তান এবং ওই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে কমিটিতে রাখা হয় সিএমপি কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সিডিএ সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এবং চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের দুই পরিচালককে। কমিটি গত সোমবার বৈঠক করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে।  

বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে আমরা মূলত তিনটি  বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। ঘটনাস্থলে কোনো প্রকল্প আছে কিনা, থাকলে তা কোন সংস্থার এবং প্রকল্প এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দিনের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। নালা সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশের দোকানদারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। দোকানদারদের জিজ্ঞেস করলাম, এখানকার নালার ওপর অতীতে কোনো স্ল্যাব ছিল কি না। তারা বলল, ছিল। তবে কে বা কারা স্ল্যাবগুলো তুলে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি সেখানে বর্তমানে সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজ চলাকালীন সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। তাই ব্যবসায়ী নিখোঁজের মূল দায় সিডিএর। একই সঙ্গে চসিক নগরের প্রধান উন্নয়ন সেবা সংস্থা। নগরের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব চসিকের। কিন্তু চসিক ফুটপাথ ও সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করায় তারাও দায় এড়াতে পারে না।’ অভিযোগ উঠেছে, সেবা সংস্থা পানি-আবর্জনা নিষ্কাশনে নালা-ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে না। ফলে বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। একই সঙ্গে নালা-ড্রেনে স্ল্যাব না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে পথচারী। নালায় পড়ে হারাচ্ছে প্রাণ। বাড়ছে অপমৃত্যু। এ নিয়ে সেবা সংস্থাগুলো দায়িত্বশীল কোনো ভূমিকাই পালন করছে না। বরং সংস্থাগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করছে। দোষারোপের সংস্কৃতি চর্চা করতে করতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। নগরের নালা পরিষ্কার ও ড্রেনে স্ল্যাব বসানোর দায়িত্ব চসিকের।  জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে কেবল নালায় পড়ে নিখোঁজের নয়, নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে মাজারগেট এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯)। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযানের পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা নালার বর্জ্য থেকে সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে নগরীর মাঝিরঘাট রোডের ড্রেন থেকে অজ্ঞাত (৩৫) এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ড্রেনে পড়ে গিয়ে উঠতে না পেরে মারা গেছেন এ অজ্ঞাত পথচারী। গত ৩০ জুন দুপুরে নগরীর ২ নম্বর গেট মেয়র গলিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশা খালে পড়ে মারা যান খাতিজা বেগম (৬৫) ও চালক মো. সুলতান (৩৮)। নগরে এভাবে একের পর এক অকালমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কোনো সংস্থা এর দায় নিতে চায় না।

সর্বশেষ খবর