বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নথি উদ্ধার নিয়ে চাপে সিআইডি

মাহবুব মমতাজী

নথি উদ্ধার নিয়ে চাপে সিআইডি

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চুরি হওয়া নথি উদ্ধার নিয়ে চাপে পড়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। নথিপত্র উদ্ধারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি সংস্থাটি। জিজ্ঞাসাবাদে কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য মিলছে না। কেউই সত্য কথা বলছেন না। আবার কেউ কাউকে দোষও দিচ্ছেন না। চুরির ঘটনায় ছায়াতদন্তে গতকালও রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আরও দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদিকে নথি বের করার জন্য সিআইডির প্রতি চাপ আছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে জানাতে গতকাল বিকালে সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা। বৈঠকে সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন ছাড়াও চার বিভাগের চারজন বিশেষ পুলিশ সুপার ছিলেন বলে জানা গেছে।

তবে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, নথি উদ্ধারের বিষয়ে ওপর মহল থেকে চাপে রয়েছে সংস্থাটি। যে কোনোভাবে নথি উদ্ধারের নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে নথি চুরির ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি, আবার সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ক্ষেত্রে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা গ্রেফতারের জন্য আদালতের অনুমতি লাগে। যেগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যাদের সন্দেহের মধ্যে রাখা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। এদেরও অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি প্রয়োজন। ২০১৮ সালে পাস হওয়া ‘সরকারি চাকরি বিল, ২০১৮’ এর একাদশ অধ্যায়ের সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধ শীর্ষক ৪১ ধারার উপধারা ১-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হইবার পূর্বে তাহাকে গ্রেফতার করিতে হইলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’ নাম না প্রকাশের শর্তে সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সচিবালয়ের যাদের ডাকা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। প্রযুক্তিগত ও ফরেনসিক পরীক্ষার বিশ্লেষণে যাদের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসছে, তাদের নথিগুলোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বলছেন, ‘ফাইল আমার কাছে ছিল, আমি ধরেছি। আলমারিতে রেখেছি। কিন্তু সেখান থেকে কোথায় গেল তা বলতে পারছি না।’ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা কেউই কাউকে দোষারোপ করছেন না। কাউকে তাদের সন্দেহ হয় কি না সে ব্যাপারেও কিছু বলছেন না। কর্মচারীদের এই সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী। তাদের এক কথার সঙ্গে অপর কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু জটিলতার কারণে অধিকতর তদন্ত করতেও কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে তাদের সচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের অনুমতি নিয়েই কয়েক দিন ধরে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে। এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭ নথি হারিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ২৮ অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। গত ৩১ অক্টোবর সিআইডি ও থানা পুলিশ ওই বিভাগে গিয়ে বেল্লাল পলাশ, আবদুল বারী, আয়েশা সিদ্দিকা, জোসেফ সরদার, বাদল ও মিন্টু নামের ছয় কর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। মঙ্গলবার অহিদ খান, সেলিম ও হাবিব নামে মন্ত্রণালয়ের আরও তিন কর্মচারীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। এরা গতকাল পর্যন্ত সিআইডির হেফাজতেই ছিল বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর