শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উত্তরণের পর এলডিসি সুবিধা অনিশ্চিত!

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২তম মিনিস্ট্রিয়াল সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা আজ

মানিক মুনতাসির

জাতিসংঘের মানদন্ড অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের তিনটি সূচক রয়েছে। সেগুলো হলো- অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতায় ৩২ পয়েন্টের নিচে থাকতে হবে, মানব সম্পদ উন্নয়নে ৬২ পয়েন্টের বেশি পেতে হবে ও মাথাপিছু আয় হতে হবে ১ হাজার ২৩০ ডলার। এর তিনটিতেই উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়ে তো ইতিমধ্যে আড়াই হাজার ডলার অতিক্রম করেছে। অবশ্য এটার জন্য ভিত্তিবছর পরিবর্তন করা হয়েছে। সে হিসেবে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করার সময়সীমা ছিল। বাংলাদেশের অনুরোধ তা ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাপ্ত বাণিজ্য সুবিধাসমূহ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তবে নিয়ম অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণের পর আরও কয়েক বছর এসব সুবিধা বহাল থাকে। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেসব সুবিধা আরও ১২ বছর পর্যন্ত বহাল রাখতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলোই যে কোনো দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এসব সুবিধা বাংলাদেশ আদৌ পাবে কিনা-পেলে কতদিন পাবে, কী ধরনের সুবিধা পাবে এসব বিষয় নিয়ে নানা ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ডব্লিউটিওর ১২তম মিনিস্ট্রিয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশও অংশ নেবে। ওই সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা হিসেবে আজ সন্ধ্যা ৭টায় অনলাইনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় ডব্লিউটিও সব সদস্য দেশ ও ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। ভার্চুয়াল এ সভায় এলডিসি উত্তরণের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া ১২তম মিনিস্ট্রিয়াল সভার প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশনও দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পরও বিনা শুল্কে রপ্তানি সুবিধা চালু থাকার ব্যাপারে বাংলাদেশ আশাবাদী। এই সুবিধার সময়সীমা বাড়াতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে আলোচনা চলছে। আজকের সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া এটি মূলত ১২তম মিনিস্ট্রিয়াল সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা।

সূত্র জানায়, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ডব্লিউটিও হয়তো বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী আরও ১২ বছর ওইসব সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে না, কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে থাকা দেশগুলোকে শুল্ক সুবিধার সময় বাড়ানোর ব্যাপারে সংস্থাটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। এ ছাড়াও সংস্থাটির প্রভাবশালী সদস্যরা ইতিমধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও সেসব দেশকে বিশেষ কোনো বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া যায় কিনা-সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। কেননা গত প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলো। এ কারণে শুল্ক সুবিধার সময় বাড়ানোর দাবি আরও জোরালো হয়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানেই রয়েছে বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, আগামী জানুয়ারিতে অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশও তাদের বিভিন্ন দাবিগুলোকে অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সামনে উত্থাপন করবে। আসন্ন এই সম্মেলনে এলডিসির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হবে। জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনসিডিপির দ্বিতীয় ত্রি-বার্ষিক নিরীক্ষায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যে এলডিসি থেকে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ এলডিসি থেকে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার তিনটি শর্ত পূরণ করেছে, যেগুলো হচ্ছে মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই), হিউম্যান অ্যাসেটস ইনডেক্স (এইচএআই) এবং ইকোনমিক ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স (ইভিআই)। সূত্র জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা, কম সুদে বিদেশি ঋণ ও অনুদান পেয়ে থাকে। এ তালিকায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪৭টি দেশ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্ব থেকেও অব্যাহতি পেয়ে আসছে। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এই সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এসব সুবিধা থাকবে না। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ বাড়বে। একইভাবে সংকুচিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়াবে রপ্তানির বাজারেও। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শুল্ক বাড়বে। ফলে বাংলাদেশকে বছরে ২৭০ কোটি ডলার রাজস্ব দিতে হতে পারে। এ ছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৪০০-৫০০ কোটি ডলারের আঘাত পড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর