শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়বে ক্রীড়াঙ্গনও

মাহমুদ আজহার, গ্লাসগো (স্কটল্যান্ড) থেকে

গ্লাসগো সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে শামিল হয়েছে ক্রীড়াঙ্গনও। বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা, দল, ক্রীড়াবিদ বৈশ্বিক এ সমস্যা মোকাবিলায় আগামীতে কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী ইউএনএফসিসিসির ‘স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক’।

স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক (এস ফোর সি এ) বুধবার গ্লাসগো সম্মেলনে উচ্চাভিলাষী এক ‘নির্গমন হ্রাস’ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে  রয়েছে ২০৪০ সালের মধ্যে নেট জিরোয় পৌঁছানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৫০ শতাংশ হ্রাস করা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিজ্ঞানীদের ঐকমত্য প্রতিক্রিয়া হচ্ছে- বিশ্বকে ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন অর্ধেক করতে হবে এবং ২০৫০-এর আগে নেটশূন্য অর্জন করতে হবে। স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্কের সব সদস্যকে নতুন এ লক্ষ্য গ্রহণ করার জন্য সম্মেলন থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ক্রীড়া সংস্থা, দল, ক্রীড়াবিদ এবং অনুরাগীদের লক্ষ্য পূরণে কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জরুরি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণে এ ফ্রেমওয়ার্ক কাজ করবে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের নির্বাহী সচিব প্যাট্রিসিয়া এস্পিনোসা গ্লাসগো সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক চালু করার চার বছর পর থেকে ২৮০টির বেশি ক্রীড়া সংস্থা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে খেলাধুলাকে সারিবদ্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। এ সেক্টরটি আগ্রহের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। তারা আরও কিছু করতে চায় এবং এটি দ্রুত করতে চায়। এ সংস্থাগুলো এখন ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নির্গমন কমাতে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে নেটশূন্য নির্গমন অর্জনের জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়েছে।’ ইউএনএফসিসিসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি, ফিফা, অ্যাথলেটিক্স কেনিয়া, বিবিসি স্পোর্ট, প্রিমিয়ার লিগ, ফরমুলা ই এবং মুনস্টার রাগবিসহ স্বাক্ষরকারীরা এ নতুন লক্ষ্যে পৌঁছাতে একমত হয়েছেন।

 এ ছাড়া স্বাক্ষরকারীরা ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বার্ষিক অগ্রগতির রিপোর্ট ও রূপরেখা জমা দিতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। সম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হয়েছে- স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্কে স্বাক্ষরকারীর মধ্যে যারা এ লক্ষ্যগুলো গ্রহণ করবেন তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রেস টু জিরো’য় প্রবেশ করবেন। ৭৩৩টি শহর, ৩১টি অঞ্চল, ৩ হাজার ৬৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ১৭৩টি বৃহত্তম বিনিয়োগকারী এবং ৬২২টি উচ্চশিক্ষার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘রেস টু জিরো’ উদ্যোগের একটি জোট। ইউএনএফসিসিসির স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্কের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। এক. জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব ক্রীড়া সম্প্রদায়ের জন্য একটি সুস্পষ্ট পথনির্দেশিকা তৈরি এবং দুই. বিশ্বব্যাপী নাগরিকদের মধ্যে জলবায়ু সচেতনতা তৈরির জন্য খেলাধুলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।গ্লাসগো সম্মেলনে এ উদ্দেশ্য অর্জনে অনেক ক্রীড়া কিংবদন্তি খেলাধুলার ভবিষ্যৎ এবং জলবায়ু নিয়ে তিনটি সেশনে অংশ নিচ্ছেন। মোনাকোর এইচএসএইচ প্রিন্স আলবার্ট এবং ফিফা কাউন্সিলের সদস্য ইশা জোহানসেন ‘স্পোর্টস অন নেট-জিরো ট্র্যাক : অ্যাম্বিশন, ইনভেস্টমেন্টস, ইনোভেশন অ্যান্ড কোলাবরেশন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় থাকছেন। এতে বক্তা থাকবেন ফরেস্ট গ্রিন রোভারের মালিক নিকো রোসবার্গ ও ডেল ভিন্স। দ্বিতীয় আরেকটি প্যানেল আলোচনার শিরোনাম হচ্ছে, ‘অর্থপূর্ণ পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করার জন্য খেলাধুলার ব্যবহার’। অন্যদের মধ্যে হান্না মিলস এবং লেডলি কিংয়ের মতো ক্রীড়াবিদরা এ আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন। ইউএনএফসিসিসি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সমর্থন ও গাইড করার জন্য ২০১৮ সালে ‘স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন’ গঠন করে। এর অধীনে ক্রীড়া সংস্থাগুলো এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তাদের সেক্টরকে নিম্ন কার্বন অর্থনীতির পথে স্থাপন করার জন্য একটি উদ্যোগ নেন যাতে ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্বনেতারা একমত হয়েছিলেন। প্যারিস চুক্তিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ২ ডিগ্রির নিচে রাখতে খেলাগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

 

 

সর্বশেষ খবর