শিরোনাম
সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দুবাই এক্সপোতে দুনিয়া দেখা

মেজবাহ্-উল-হক, দুবাই থেকে

দুবাই এক্সপোতে দুনিয়া দেখা

বিশ্বের ১৯২টি দেশের অংশগ্রহণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘দুবাই এক্সপো’। প্রতিটি দেশ একদিকে যেমন তাদের প্যাভিলিয়নে নিজেদের শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ নানা বিষয় তুলে ধরছে, অন্যদিকে সভা সেমিনারের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে নিজেদের অগ্রগতি ও সম্ভাবনা নিয়ে ভাব বিনিময় করছে। দুবাই এক্সপোর মাধ্যমে এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের বন্ধুত্ব বাড়ছে। বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

দুবাই এক্সপোতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশও। এখানে ২২  কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন। চেষ্টা করা হয়েছে দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য। যদিও বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন ততটা জমকালো নয়। তারপরও সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে চিরায়ত বাংলার প্রকৃতিকে। এখানে পাটজাত শিল্প, বাংলাদেশের  তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গার্মেন্টস শিল্পকেও। এ ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্যাভিলিয়নের ভিতরে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। স্থির চিত্র ও অডিও ভিজুয়্যালের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও অন্য দেশের প্যালিভিয়ন ঘুরে আসলে মনে হতে পারে নিছক দায়সারা গোছের করে বানানো হয়েছে। কেন না প্রতিটি দেশ আরও চমকপ্রদভাবে তাদের দেশকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। কী অসম্ভব সুন্দর এক একটি প্যাভিলিয়ন!

ব্রাজিলের প্যাভিলিয়নে গেলে চোখে পড়বে তাদের সংস্কৃতি নিয়ে চোখ ধাঁধানো উপস্থাপনা। গেট দিয়ে ঢুকতেই মিলবে আমাজনের জঙ্গলে প্রবেশের অনুভূতি। নিচে পানির উপরে ভিজুয়্যাল বনের ছবি। আবার মুুহূর্তে  যেন সব কিছু পরিবর্তন হয়ে সেটা বিখ্যাত কাপা কোপানা সমুদ্র সৈকত হয়ে যাচ্ছে। ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বিখ্যাত সাম্বা নৃত্যেরও। কখনো কখনো পুরো প্যাভিলিয়নকে বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামের আকৃতি দেওয়া হচ্ছে।  দেখানো হচ্ছে বিখ্যাত ফুটবলারদের চিত্র। এ ছাড়া ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরের কৃষ্টি-ঐতিহ্যও তুলে ধরা হচ্ছে।

সুইডেন তাদের প্যাভিলিয়নে সুইডিশ বনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পরই মনে হবে আপনি  যেন সত্যি সত্যি বনের মধ্যে প্রবেশ করছেন। পাখির কিচির-মিচির আওয়াজও পাওয়া যাবে। এছাড়া সুইডেনের বিখ্যাত সব জিনিসপত্র রাখা হয়েছে পাশে। দর্শনার্থীরা মুগ্ধতা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

এমনকি সৌদি আরবও তাদের সংস্কৃতিকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত পুরো আয়োজনে নিজেদের সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে। দুবাই এক্সপোতে এক একটি প্যাভিলিয়ন যেন এক একটি  দেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন  সেমিনারের মাধ্যমে নিজেদের দেশে ব্যবসা-বিনিয়োগ করার জন্য অন্যদের আকৃষ্ট করছে। এখানে যেন অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। দুবাই এক্সপো পরিদর্শন করতে যাওয়া চট্টগ্রামের আমিরাত প্রবাসী ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে এমন একটি এক্সপোতে বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছি। তবে আরও ভালো লাগত যদি অন্য দেশের প্যাভিলিয়নের মতো আমাদের প্যাভিলিয়নটাও আরও সুন্দর হতো। আমাদের  দেশের কত সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান আছে, আমাদের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি আছে, কিছুই সেভাবে এখানে উপস্থাপন করা হয়নি। আশা করছি, পরের বার এসব ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে দারুণভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন কর্তৃপক্ষ।’ সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত  মো. আবু জাফর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছি। গত ১২ বছরে বাংলাদেশ  যে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে- আমরা সেটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের যেসব সংস্কৃতি আছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়গুলো এখানে অডিও ভিজুয়্যালের মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই এক্সপোতে প্রত্যেকটি দেশই চেষ্টা করেছে তাদের সেরা বিষয়গুলো তুলে ধরতে। সবাই সবার অর্জন তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।’ দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ ২০টি সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি হয়েও গেছে। প্রতিটিতেই দারুণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিনিয়োগ আকর্ষণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আয়োজনে শনিবার একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক সহযোগিতা করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ মিশন এবং দুবাই-এ অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়। সেমিনারে দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এবং ভারত, চীন, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন। সেমিনারের মূল  প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কর্মকা  সবার সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করা হয়।  সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেজার নির্বাহী সদস্য এবং অতিরিক্ত সচিব আব্দুল আজিম চৌধুরী বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিকল্পিত এবং ডাইনামিক অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে অর্থনীতির মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণে  বেজা ভূমিকা রেখে চলেছে।’ দুবাই এক্সপোতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সেমিনারে তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন  সেক্টরকে।

এবারের দুবাই এক্সপো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১ হাজার ৮০ একর জমির ওপর। এখানে ১৯২টি দেশ ছাড়াও ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশ নিচ্ছে। গত ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই দুবাই এক্সপো চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এক্সপো ৫ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইতালির মিলানে। ২০২০ সালে হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর পিছিয়ে দুবাইয়ে হচ্ছে। পরের আসর হবে ২০২৫ সালে জাপানের ওসাকায়। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন। সাধারণ দর্শনার্থীর সংখ্যাও কম নয়। তারা বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে দেখছেন। সবার ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানছেন। দুবাই এক্সপোতে এসে তারা  যেন একসঙ্গে পুরো দুনিয়াকে দেখে নিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর