সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

অষ্টাদশ শতকের জমিদারবাড়ি আজ কালের সাক্ষী

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

অষ্টাদশ শতকের জমিদারবাড়ি আজ কালের সাক্ষী

অষ্টাদশ শতকের ঐতিহ্যবাহী রখুনিকান্ত জমিদারবাড়ি আজও ভগ্নদশায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখভালের অভাবে এই জমিদারবাড়ির অনেক জায়গা বেদখল হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অষ্টাদশ শতকের জমিদারবাড়িসহ জমিদারের শত শত বিঘা জমি বনজ, ফলজ ও ঔষধি বাগান সংরক্ষণের অভাবে আজ বিলীন হতে চলেছে। জানালা-দরজা না থাকলেও অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে।

 যুগ যুগ ধরে এ জমিদারবাড়িটি মেরামত ও সংস্কার না করায় তা ধ্বংসের পথে। অথচ এই জমিদারবাড়িটিকে সংস্কার করে সরকারি কোনো দফতরের কাজে লাগানো কিংবা এটিকে আকর্ষণীয় করে ঐতিহ্য ধরে রাখলে ইতিহাসের পাশাপাশি পর্যটকদের জ্ঞানপিপাসা মিটাতে পারত বলে স্থানীয়রা মনে করেন। এখনো দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ঐতিহ্যবাহী এই জমিদারবাড়ি দেখতে আসেন। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার উত্তরে ১২ কিলোমিটার দূরে খানপুর ইউনিয়নের রতনপুরে এ ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ির অবস্থান। বিরামপুর ঢাকা মোড় থেকে রিকশাযোগে নবাবগঞ্জ রোডে রেললাইন পার হলেই রতনপুর বাজার এবং এ বাজারেই রখুনিকান্ত জমিদারবাড়ি। বর্তমানে রখুনিকান্ত বাবুর জমিদারবাড়ির পাশে রয়েছে ইসলামিক মিশন, ইবতেদায়ি মাদরাসা, দাখিল মাদরাসা ও এতিমখানা, মসজিদ, গুচ্ছগ্রামসহ বিশাল একটি পুকুর।

জানা যায়, ব্রিটিশরা অষ্টাদশ শতকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর জমিদারের খাজনা আদায়কারী হিসেবে রাজকুমার সরকারকে বিরামপুরের রতনপুর কাচারিতে প্রেরণ করা হয়। এখান থেকে তিনি বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ফুলবাড়ী এলাকার প্রজাদের কাছ থেকে নৈপুণ্য ও যোগ্যতার সঙ্গে খাজনা আদায় করতেন। আদায়ের কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে জমিদার তার বোনের সঙ্গে রাজকুমারের বিয়ে দেন এবং তাকে সাড়ে ৬০০ বিঘা জমিসহ রতনপুর কাচারি উপহার দেন। সাধারণ আদায়কারী থেকে জমিদার হয়ে রাজকুমার আরও অধিক অর্থসম্পদের নেশায় মেতে ওঠেন। অন্যদিকে একই মৌজায় আড়াই শ একর জমি ও অঢেল অর্থের মালিক রঘু হাসদা নামের একজন প্রতাপশালী সাঁওতাল ছিলেন। রাজকুমার সুযোগ বুঝে সাঁওতাল রঘু হাসদার কাছ থেকে ৫ বস্তা কাঁচা টাকা ধারে নিয়ে অন্য জমিদারের আরও ৩০০ একর জমি নিলামে ডেকে ৫০ একর ফলের বাগান দখল করে নিয়ে উপকারী রঘু হাসদাকে বিতাড়িত করেন। এলাকায় একক জমিদার হিসেবে তৈরি করেন সুদৃশ্য দ্বিতলবিশিষ্ট মনোরম অট্টালিকা।নতুন জমিদার রাজকুমারের রতন কুমার ও রখুনিকান্ত কুমার নামে দুই পুত্রসন্তানের মধ্যে ১৬ বছর বয়সের বড় ছেলে রতন কুমার পাশে মন্দিরের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে মারা যায়। পুত্র শোকে কিছুদিন পর রাজকুমারের মৃত্যু হলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অঢেল সম্পদ, বাগান ও পুকুরসহ প্রায় ১২০০ বিঘা জমিদারি লাভ করেন অপর ছেলে রখুনিকান্ত রাজকুমার সরকার। ১৯৭১ সালে রখুনিকান্ত সস্ত্রীক একটি মহিষের গাড়িতে চড়ে রাতের আঁধারে কলকাতার উদ্দেশে তার বংশধরদের কাছে পাড়ি দেন। পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তার বাড়িসহ সহায়-সম্পদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর