বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মশার উপদ্রব, অতিষ্ঠ নগর

সারা বছরই ভোগান্তি, আশ্বাস দেয় সিটি কাজ হয় না

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মশার উপদ্রব, অতিষ্ঠ নগর

রাজধানীতে এডিসের সঙ্গে বাড়ছে কিউলেক্স মশার উৎপাত। বছরজুড়ে মশার উপদ্রব পোহাতে হয় নগরবাসীকে। মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও এখনো প্রতিদিন শতাধিক মানুুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরে। মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নামমাত্র ওষুধ ছিটানো ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ১৫০ কোটি টাকা মশক নিধনে বরাদ্দ করলেও বহাল তবিয়তে আছে মশা। ওষুধ কিংবা ধোঁয়া কোনো কিছুই বাগে আনতে পারছে না মশাকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মশক নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বরাদ্দ রেখেছে ১১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কীটনাশক কিনতে ৪৫ কোটি টাকা, আগাছা ও কচুরিপনা পরিষ্কার করতে ৩ দশমিক ৫০ কোটি, মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৩ কোটি টাকা, আউটসোর্সিংয়ে ২৭ কোটি টাকা, চিরুনি অভিযান পরিচালনায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এ ছাড়াও মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ডিএনসিসি বরাদ্দ রেখেছে ২৫ কোটি টাকা।

এ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বরাদ্দ রেখেছে ৩৫ দশমিক ৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কীটনাশক কিনতে ২২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা, আগাছা ও কচুরিপনা পরিষ্কার করতে ৫ লাখ টাকা, মশক নিধনের যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এ ছাড়াও মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ডিএসসিসি বরাদ্দ রেখেছে ৯ কোটি টাকা।

প্রতি বছর মশক নিধন খাতে এ রকম বরাদ্দ থাকলেও উপদ্রব কমছে না মশার। বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরের ভয় আর বাকি সময় ঝাঁকে ঝাঁকে কিউলেক্স মশার কামড়ে ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে প্রাণ। এ বছর অক্টোবর পার হয়ে নভেম্বর মাস শুরু হলেও কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৩ জন। এর মধ্যে ১৩১ জন ঢাকার হাসপাতালে এবং ৩২ জন মহানগরের বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৬৫ জন। মারা গেছেন ৯৬ জন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুন মাসে ২৭২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। জুলাই মাসে এই সংক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। জুলাইতে ২ হাজার ২৮৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। আগস্ট মাসে এর পরিমাণ ছিল তিন গুণেরও বেশি ৭ হাজার ৬৯৮ জন। সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৭ হাজার ৮৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪৫৮ জন। নভেম্বরের ১০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪১০ জন। বছরজুড়েই থাকছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আবহাওয়ার পারদ নিচে নামতেই সজাগ হচ্ছে কিউলেক্স মশা। সূর্য ডুবলেই দরজা-জানালা গলে বাসা-অফিসে হানা দিচ্ছে মশা। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ডেঙ্গু মৌসুমে দুই সিটি করপোরেশন বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এখন মশক নিধনে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। রাজধানীর মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা চারুলতা বিশ্বাস বলেন, বিকাল হতেই বাসার সব জানালা বন্ধ করে দিই। কিন্তু তাতেও নিস্তার মেলে না। মশার কামড়ে ছেলেমেয়েরা পড়তে বসতে পারে না। কয়েল, ব্যাট কিছুতেই যায় না মশা। তিনি বলেন, দিনে এডিস মশার ভয়, রাতে কিউলেক্স মশার কামড়। আগে তাও সিটি করপোরেশন থেকে ফগিং করা হতো। গত দুই মাসে আমাদের এখানে কোনো মশক নিধন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে আসে। কিন্তু এ বছর মৌসুম শেষ হলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত ঊর্ধ্বমুখী। অসময়ের এই বৃষ্টির কারণে এডিস মশার লার্ভা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে। আসলে ডেঙ্গু এখন সারা বছরই থাকবে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে কিউলেক্স মশা। তিনি আরও বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আলাদা ব্যবস্থাপনা এবং কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে আলাদা ব্যবস্থাপনা নিতে হবে। মশক ব্যবস্থাপনায় চারটি দিক রয়েছে সেগুলো হলো, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, কীটনাশক, বায়োলজিক্যাল ব্যবস্থাপনা এবং কমিউনিটিকে সংযুক্ত করা। এ চারটি বিষয় খেয়াল রেখে কাজ করলে মশা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর