শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজধানীতে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য চলছেই

সড়কে এলোমেলো গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো বন্ধ হয়নি (ওপরে)। সিএনজি ও ডিজেলচালিত গাড়িতে লাগানো হচ্ছে স্টিকার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নতুন করে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। নতুন এ সিদ্ধান্তের সুযোগে পরিবহন মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যার যেমন ইচ্ছা তেমন ভাড়া আদায় করছেন তারা। এতে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ঝগড়া লেগেই আছে। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে যায়ায়াত করে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন গণপরিবহন শ্রমিকরা। তারা কোনো নিয়ম-নীতি মানছেন না। কিলোমিটার না মেনেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে।

তবে পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি কিলোমিটার বা মিটার মেপে ভাড়া আদায় করা সম্ভব নয়। তাদের টিকিট কাউন্টারগুলোও মিটার মেপে বাসানো হয়নি। ফলে আগের নির্ধারিত ভাড়া থেকে প্রতি কাউন্টারে গড়ে পাঁচ টাকা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

কামরুল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমি মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট এলাকায় আসি। আগে এখানে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। এখন ভাড়া দিতে হয়েছে ২৫ টাকা।’ এদিকে সরকার-নির্ধারিত নতুন ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে বিভিন্ন রুটের বাসে জরিমানা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ও পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সরওয়ার আলম ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পরিদর্শন করেন এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সরওয়ার আলম এ প্রতিবেদককে জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে তাদের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা    ও চট্টগ্রামে গতকাল দিনভর ৩৩৬টি বাস ও মিনিবাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন। এসব অভিযানে ২৮৭টি ডিজেল এবং ৪৯টি সিএনজিচালিত মিনিবাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান চলাকালে বাসের যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ‘উইনার’ ও ‘দেওয়ান’ পরিবহন যে কোনো জায়গা থেকেই ওঠা হোক না কেন ১০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা করে নিচ্ছে। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হওয়ার পরও স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের কাছ থেকে তারা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।

চালক ও তার সহকারী এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টরা তাদের মন মতো ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রীদের পকেট কাটছেন। অতিরিক্ত ভাড়া না দেওয়া হলে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নয় তো বাসে উঠতেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। জিগাতলা থেকে রামপুরা পর্যন্ত তরঙ্গ পরিবহনের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। তারা এখন ৩০ টাকা নিচ্ছে। যদিও সরকারি তালিকা অনুযায়ী এ দূরত্বের ভাড়া হবে ১৯ টাকা। আগে ছিল ১৫ টাকা। পাঁচ টাকা বাড়তি ভাড়া তারা আগে থেকেই নিত। এখন বাড়তি নিচ্ছে ১১ টাকা। সায়েদাবাদ-টঙ্গী রুটের বলাকা বাসে কাকরাইল থেকে মহাখালী পর্যন্ত ভাড়া ১১ টাকা থেকে বেড়ে ১৪ টাকা হয়েছে। কিন্তু তারা নিচ্ছে ২০ টাকা। আগে নিত ১৫ টাকা। সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর সারা দেশে তিন দিন পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন গণপরিবহন মালিকরা। এরপর ৭ নভেম্বর তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। এ ছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, মহানগরে বাস ভাড়া কিলোমিটারে ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটি ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ছিল ১ টাকা ৬০ পয়সা, সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর