শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্লাসগোয় পর্দা নামল জলবায়ু সম্মেলনের

পরবর্তী আয়োজক মিসর ও আরব আমিরাত

মাহমুদ আজহার, গ্লাসগো (স্কটল্যান্ড) থেকে

গ্লাসগোয় পর্দা নামল জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের। পরবর্তী ২০২২ ও ২০২৩ সালের এই সম্মেলন মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিটেনের স্কটল্যান্ড রাজ্যের গ্লাসগোতে চলমান কপ-২৬ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার পরবর্তী দুই সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের নাম ঘোষণা করা হয়। মিসরের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২২ সালের কপ-২৭ সম্মেলন তারা দেশটির লোহিত সাগর উপকূলীয় পর্যটন কেন্দ্র শারম আল শেখে আয়োজন করবে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি আফ্রিকার পক্ষে কপ-২৭ আয়োজন করার প্রস্তাব করেন। ওই সময় তিনি বলেন, মিসরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবার সহযোগিতা নিয়ে আফ্রিকা ও সারা বিশ্বের উপকারে আন্তর্জাতিক  জলবায়ু সংরক্ষণ প্রচেষ্টার  বৈপ্লবিক পট পরিবর্তন করা হবে। অপরদিকে কপ-২৮ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের আমির শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুম এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সম্মেলন সফল করতে আমরা আমাদের সব সক্ষমতা কাজে লাগাব। সংযুক্ত আরব আমিরাত পৃথিবী রক্ষায় বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়ক পদক্ষেপ পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী মরিয়ম বিনতে মোহাম্মদ আল-মেহেরি এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘এই বৈশ্বিক সমাবেশ আয়োজন আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দিয়েছে। সমাজের গতিশীল উপাদান আমাদের তরুণদের সম্মেলন ও আলোচনার সঙ্গে সংযুক্ত করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীল ভবিষ্যতের সর্বোচ্চভাবে নিশ্চিত করার।’

এদিকে, ১ নভেম্বর এই সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরিবেশ সংরক্ষণে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে যৌথ ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ, ২০৫০ সালের মধ্যে বিভিন্ন দেশের কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার ঘোষণাসহ বিভিন্ন চুক্তি এই সম্মেলনে স্বাক্ষরিত হয়েছে।

নতুন খসড়া চুক্তিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান : জলবায়ু সংকট নিরসনে কপ ২৬ সম্মেলনে নতুন খসড়া চুক্তি হয়েছে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দিতে বিশ্ব নেতাদের জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে কপ ২৬ জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল প্রকাশিত হলো নতুন খসড়া চুক্তিটি। এতে আগের তুলনায় দেশগুলো কীভাবে দ্রুত গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে আনবে, তার পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে খসড়া চুক্তিতে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো নিয়ে কিছুটা নমনীয় করা হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ চুক্তি চূড়ান্ত হতে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব দেশকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এ জন্য সময় লাগতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব সামলাতে এ বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার যে লক্ষ্য, তা এখন ‘লাইফ সাপোর্টে’ চলে গেছে।

এদিকে গত বুধবার প্রকাশিত জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন না করেই নতুন এ খসড়া চুক্তি প্রকাশ করা হলো। একে প্রথম খসড়া চুক্তির দ্বিতীয় সংস্করণ বলা হচ্ছে। প্রাক্-শিল্পায়নের সময় থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয় দেশগুলো। চুক্তি অনুযায়ী, তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখার ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বনের নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে নির্গমন আনতে হবে শূন্য শতাংশে।

সর্বশেষ খবর