শিরোনাম
সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাড়তি ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডা

সিটিং গেটলক নিয়ে লুকোচুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়তি ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডা

রাজধানী ঢাকায় ‘সিটিং’ ও ‘গেটলক’ সার্ভিস থাকছে না এমন ঘোষণার পর থেকে শুরু হয়েছে আরেক নৈরাজ্য। গতকাল থেকে এসব সার্ভিস বন্ধের জন্য ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষে ঘোষণা দেওয়া হলেও ঢাকার কোথাও কোথাও এখনো এসব বাসের সেবা বন্ধ হয়নি। আবার রাজধানীজুড়ে এসব বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর মধ্যেই যাত্রীদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বাসচালকরা বলছেন, সিটিং, গেটলক বন্ধ থাকায় তারা আগের তুলনায় কম ভাড়া পাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, ঢাকার ১২৮টি রুটে সিটিং সার্ভিস, গেটলকসহ বিভিন্ন সার্ভিসের বাস চলাচল করে। কিন্তু এসব সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেই। গতকাল থেকে এসব সার্ভিস বন্ধ রাখা হবে বলে ১০ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়। সেই সম্মেলনে তিন দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরে সিটিং ও গেটলক থাকবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু গতকালও রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে বাসে সিটিং সার্ভিস লেখা চোখে পড়ে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার  এনায়েত উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত মোতাবেক এরই মধ্যে রাজধানীর সিটিং ও গেটলক সার্ভিস বাসগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সিটিং ও গেটলকের নামে যে দু-একটি বাস এখনো চলাচল করছে সেগুলোর বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে সিটিং বা গেটলক সার্ভিস আর করতে দেব না। কারণ বাসচালক ও হেলপাররা সিটিং ও গেটলকের নামে বেশি ভাড়া দাবি করে থাকেন। আমরা চাই ভাড়া যাতে ঠিক থাকে। সিটিং ও গেটলক বাস সার্ভিস চালু রাখতে হলে বাস মালিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি নিয়ে চালাতে হবে।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে যারা আইন মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটরা মামলা দিচ্ছেন। ঢাকার আটটি পয়েন্টে ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের আটটি টিম প্রতিদিন কাজ করছে। খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়মে আনার চেষ্টা করছি। সময়ে সময়ে সবার সঙ্গে বৈঠক করছি। মালিক সমিতির কর্মকর্তাদের ডাকছি। একই সময়ে সড়কে অভিযানও চালাচ্ছি।’ গতকাল অভিযান চলাকালেই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে ‘ভিআইপি’ পরিবহনের বিভিন্ন বাসে সিটিং সার্ভিস লেখা দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থান, প্রজাপতি, বিহঙ্গ, অছিমসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাসে সিটিং সার্ভিস লেখা এখনো মুছে ফেলা হয়নি। গতকাল দুপুরে মিরপুর ১২ নম্বর এলাকা ঘুরে সিটিং সার্ভিস ও গেটলক বাস চলতে দেখা যায়নি। তবে সরকারি এক সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, মোহাম্মদপুর থেকে চিটাগাং রুটে চলাচলকারী বাসগুলো সিটিং ও গেটলক সার্ভিস চালু রেখেই চলাচল করেছে। মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় বাসচালক ও সহযোগীরা বলছেন, সিটিং ও গেটলক সার্ভিস হয়তো দুই থেকে তিন দিন বন্ধ থাকবে। এরপর আবার আগের নিয়মে চলাচল শুরু হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গন্তব্যের বাসগুলোর টিকিট কাউন্টার আগের মতো নেই। যাত্রীদের ডেকে ডেকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। সব আসনে যাত্রী বসার আগেই কিছু বাস এ এলাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। ‘বিকল্প অটো’ সার্ভিস নামের একটি বাসের চালক মো. আলমগীর হোসেন জানান, তাদের বাসটি মিরপুর ১২ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করে। সিটিং সার্ভিস তুলে দেওয়ায় তাদের ক্ষতি হয়েছে। যাত্রীরা ভাড়া কম দিচ্ছে। তিনি জানান, আগে মিরপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। সিটিং সার্ভিস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দিচ্ছে ১৪ টাকা। ঘোষণা অনুযায়ী নতুন নিয়মে বাস চালু হওয়ার পর লাভ-ক্ষতির হিসাব দুই দিন পর মিলবে বলেও জানিয়েছেন বাসচালরো। তাদের ধারণা, এর পরই হয়তো নতুন করে সিদ্ধান্ত আসবে। আবার যারা গত সপ্তাহে বাসে ভাড়ার চার্ট ঝুলিয়েছিলেন, তারাও সেটি সরিয়ে নিয়েছেন। ‘ভাড়া বেড়েছে’ দাবি করে চাওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এ জন্য বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের সঙ্গে বাসচালক ও হেলপারদের ভাড়া নিয়ে বাধছে বিতন্ডা। সেই বিতন্ডা তীব্র রূপ লাভ করছে। কোথাও কোথাও ভাড়া নিয়ে হেলপারদের সঙ্গে যাত্রীদের হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সকাল থেকে বিআরটিএর আটটি এবং জেলা প্রশাসনের দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সিটিং সার্ভিসের বাসসহ বিভিন্ন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বন্ধে বিআরটিএর অভিযান চলছে। সিটিং সার্ভিস বা গেটলক সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেই। ৩ নভেম্বর রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয় ১৫ টাকা করে। ফলে ৬৫ টাকা থেকে এক লাফে ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম হয় ৮০ টাকা। এরপর বাস মালিকদের ৬০ ঘণ্টার অঘোষিত ধর্মঘটের পর ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৪(২)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করল। আন্তজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে একজন যাত্রীর জন্য প্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সার স্থলে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা ও ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর