সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ১৪ বছর

কেমন আছে সেই সিডর বেবি

প্রতিদিন ডেস্ক

কেমন আছে সেই সিডর বেবি

সিডরের সময় জন্ম নেওয়া মারিয়া এখন তরুণী। বরগুনার পাথরঘাটায় তার পাশে দাঁড়িয়ে মা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আজ ১৫ নভেম্বর। ভয়াল সুপার সাইক্লোন সিডরের ১৪ বছর। ২০০৭ সালের এই দিনে ২৪০ কিলোমিটার গতির সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাত ও ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ল-ভ- করে দেয় উপকূলীয় জনপদ। কেড়ে নেয় কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। সেই দুঃসহ স্মৃতি স্মরণে আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষ। সিডর অনেক সাক্ষী রেখে গেছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের সঙ্গে শিশু মারিয়াকেও মনে রেখেছেন অনেকে। সে ‘সিডর বেবি’ বলে পরিচিত। সেই সিডর বেবি এখন কেমন আছে? খোঁজ নিতে  সুন্দরবন-সংলগ্ন বলেশ্বর নদ পাড়ের পদ্মা গ্রামে গিয়ে কথা হয় সিডর বেবির সঙ্গে। তার আসল নাম মারিয়া আক্তার। সিডরের রাতে জন্মগ্রহণ করায় তাকে সবাই সিডর বেবি হিসেবেই চেনে। সিডরযোদ্ধা এই শিশুর আজ ১৪ বছর পেরিয়ে গেছে। বিয়েও হয়েছে তার। ১৩ বছরের মাথায় এসে থেমে যায় তার স¦প্ন। অধিকারবঞ্চিত হয় মারিয়া। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়াও হয়নি। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ইতি টেনেছেন। জানা গেছে, সিডরের দিনে অনেকের সঙ্গে মারিয়ার বাবা ফারুক মোল্লা, নানা মোস্তফা মিয়া ও নানি ফুলবরু আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে রওয়ানা হন। অন্তঃসত্ত্বা জাকিয়া বেগম ঝড়ো হাওয়ায় বাবা মোস্তফার হাত থেকে ছুটে গিয়ে হারিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ায় বাবা মোস্তফা অন্যদের আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানিক পর খুঁজে পায় জাকিয়াকে। অনেক কষ্টে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার পরপরই প্রসব বেদনায় কাতরানো শুরু করেন জাকিয়া। সেখানে অন্য নারীদের সহায়তায় রাত ১১টার দিকে আশ্রয় কেন্দ্রে জাকিয়া জন্ম দেন ফুটফুটে এক শিশু। কন্যা শিশু হওয়ায় নাম রাখা হয় ‘সিডর বেবি’। বরগুনা প্রতিনিধি জানান, সিডরের এত বছর পরও নিহতের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলার ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ মারা গেছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও ১৫৬ জন। বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। ১৫ নভেম্বর রাত রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের সব জল জমদূতের মতো এসে মানুষগুলোকে নাকানি-চুবানি দিয়ে কেড়ে নিতে শুরু করে। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সিডরে এত মৃত্যুর অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, ওই সময় আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবাণী যথাযথ ছিল না। আবহাওয়া অফিস ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত থেকে হঠাৎ করে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা ঘোষণা করে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে যে সতর্ক সংকেত প্রচার করা হয়েছিল, তা বোঝার উপায় বরগুনার মানুষের ছিল না। যারা ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শুনেছেন, তারাও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি। উপকূলীয় বরগুনায় ৫০০ এর মতো আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ২ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। জেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের জন্য এটি পর্যাপ্ত নয়।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, আরও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। স্মৃতিতে সিডরকে স্মরণ করার জন্য আজ বরগুনা জেলা প্রশাসন ও প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

শরণখোলায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ : বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ২৪০ কিলোমিটার গতির সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাত ও ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা। এই উপজেলায় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সেই বিধ্বস্ত জনপদের মানুষের দাবি ছিল একটি টেকসই বেড়িবাঁধের। একপর্যায়ে সরকার শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। তিন বছর মেয়াদের এই কাজ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও এখন পর্যন্ত তা শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ।

খুলনার কয়রায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের এখনো দুর্বিষহ অবস্থা : ১৪ বছর পরও বিভীষিকাময় দিনটি মনে হলে আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষ। উপকূলীয় জনপদ খুলনার কয়রার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখনো সিডরের দুর্বিষহ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। উপরন্তু নদীভাঙন, লবণাক্ততা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের অভাবে এখানকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর