মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ধান চাল আটা ময়দার দাম বেঁধে দিল সরকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ধান-চাল, আটা-ময়দাসহ দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের কোনটিতে কত মুনাফা করা যাবে তার একটি যৌক্তিক মূল্য ধরে বিধিমালা জারি করেছে সরকার। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের ওপর তিন স্তরভিত্তিক মুনাফা করা যাবে। এর মধ্যে কৃষক বা উৎপাদক পর্যায়ে পণ্যভেদে ৩০ থেকে ৪০, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০ আর খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা করা যাবে। কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী সম্প্রতি এ বিধিমালাটি জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। নাম দেওয়া হয়েছে কৃষি বিপণন বিধিমালা, ২০২১। এটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- কৃষিপণ্যে উৎপাদক বা কৃষক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে, শ্রম-ঘাম দিয়ে তাঁর উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে যে মুনাফা পাবেন, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা মিলে তার প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা করবেন। আবার তিন স্তরভিত্তিক মুনাফার কারণে উৎপাদন খরচের দ্বিগুণের বেশি দিয়ে পণ্য কিনতে হবে ভোক্তাকে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়- নতুন বিধিমালায় আলুসহ সব ধরনের শাকসবজির ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৪০, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ১ কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১০ টাকা হলে ৪০ শতাংশ হারে কৃষক সর্বোচ্চ ৪ টাকা মুনাফা ধরে ১৪ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এর ওপর ২৫ শতাংশ মুনাফা ধরে ১৪ টাকায় কেনা আলু পাইকার বিক্রি করবেন ১৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে। এখানে পাইকারের মুনাফা সাড়ে ৩ টাকা। আবার খুচরা বিক্রেতা পাইকারের কাছ থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১ কেজি আলু কিনে তার ওপর ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে প্রতি কেজি বিক্রি করবেন ২২ টাকা ৭৫ পয়সা দরে। অর্থাৎ কৃষক, পাইকার, খুচরা এ তিন স্তরভিত্তিক মুনাফার কারণে যে আলুর কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ ১০ টাকা তা ভোক্তা পর্যায়ে ক্রয়মূল্য পড়বে ২২ টাকা ৭৫ পয়সা। এ ক্ষেত্রে কৃষক পাবে সর্বোচ্চ ৪ টাকা মুনাফা। বাকি ৮ টাকা ৭৫ পয়সা যাবে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার হাতে। অন্যদিকে উৎপাদন খরচের দ্বিগুণের বেশি দিয়ে পণ্যটি কিনতে হবে ভোক্তাকে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক দেশের বাইরে থাকায় নতুন এ বিধিমালা নিয়ে তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কৃষি বিপণন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে উৎপাদিত পণ্যের অযৌক্তিক দাম যাতে না হয় সেজন্যই তিন স্তরভিত্তিক এ যৌক্তিক মুনাফা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাজারে হঠাৎ করে আলু, পিঁয়াজ বা কাঁচা মরিচের দাম বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। যৌক্তিক মূল্য মানা না হলে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ মুনাফার হার শুধু দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ওপর আরোপিত হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে বিধিমালায় যে কমিটির উল্লেখ আছে তারা মুনাফার হার পরিবর্তন করতে পারবেন। সরকারের বিধিমালায় ধান, চাল, আলু, পিঁয়াজ, তেল, ডালসহ দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য ছাড়াও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যেরও মুনাফা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুসারে চিঁড়া, মুড়ি, সুজি, সেমাই, আটা, ময়দার কৃষিপণ্যের রস ও জুস, আচার, বেসন, চিপস, অন্য যে কোনো প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ মুনাফার হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ রাখা যাবে। ডিম, দুধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্য, সুপারি, পান, সব ধরনের ভুসি, ডাব, নারকেল ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এসব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ। নতুন বিধিমালায় ধান, চাল, গম, ভুট্টাসহ খাদ্যপণ্যে কৃষক পর্যায়ে ৩০, খুচরা পর্যায়ে ১৫ ও পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মুনাফা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ডালজাতীয় পণ্যে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০, পাইকারি ১৫ ও খুচরায় ২৫ শতাংশ; তেলবীজ রাই, সরিষা, তিল, তিসি, বাদাম, নারকেল, রেঢ়ি, সূর্যমুখী, সয়াবিন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার হবে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ; আখ এবং সব ধরনের গুড়ের ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩৫, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ; সব ধরনের ভাজা ও শুকনা ফলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মুনাফার হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০, পাইকারি পর্যায়ে ২০ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ; সব ধরনের তাজা ও শুকনা ফুল, ক্যাক্টাস, অর্কিড, পাতাবাহারের যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৪০, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ; সব ধরনের মাছ (তাজা, শুকনা, লবণজাত ও হিমায়িত) ও অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ; পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ (কাঁচা) ও অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রে মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৪০, পাইকারি পর্যায়ে ২০ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ; ধনে, কালিজিরা, মরিচ (শুকনা) ও এ-জাতীয় অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মুনাফার হার ২৫ শতাংশ রাখা যাবে।

 

সর্বশেষ খবর