বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ডলারের উচ্চ মূল্যে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

রুহুল আমিন রাসেল

ডলারের উচ্চ মূল্যে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

দেশে মার্কিন ডলারের উচ্চ মূল্যে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বলছে- খোলাবাজার বা কাব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য এখন ৯০ টাকা ২০ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে- গতকাল প্রতি ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যদিও সংকট সামাল দিতে প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে- দেশে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো বৃদ্ধি পেলেই স্বাভাবিক হবে ডলারের বাজার।

জানা গেছে, আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে খোলাবাজারে চড়েছে ডলারের দাম। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। গত ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে দাম।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাকালে প্রায় দুই বছর ডলারের মূল্য স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। মানুষ ভ্রমণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশে ডলার নিয়ে যাচ্ছে। আবার আমদানিও বাড়ছে। শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আসছে। সব মিলিয়ে আমদানির চাপে বাজারে ডলারের দাম বাড়ছে। এই সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রচুর ডলার রিজার্ভ আছে। বাজারের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছাড়ছে। আশা করছি- রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো বাড়লেই স্বাভাবিক হবে ডলারের মূল্য।  তবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর  সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, এই সময়ে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির খুব একটা যৌক্তিক কারণ দেখছি না। তারপরও নতুন করে দেশ থেকে অর্থ পাচার বাড়ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি প্রয়োজন। ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ব্যবসায়ীদের আমদানি খরচ বাড়বে। যার প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর পড়তে পারে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। 

এ প্রসঙ্গে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোস্তফা খান বলেন, দেশে এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে মার্কিন ডলারের মূল্য। কাব মার্কেটে এখন প্রতি মার্কিন ডলার ৯০ টাকা ২০ পয়সা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলোতে মূল্য কিছুটা কম। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে প্রবাসীদের যাতায়াত কমেছে। এখন আসতে পারছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত প্রতি মার্কিন ডলারের ক্রয়-বিক্রয় দাম ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৮০ পয়সা দাঁড়িয়েছে। গত ১ নভেম্বর প্রতি ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় দাম যেখানে ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা ছিল, সেখানে গতকাল ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে ডলারের ক্রয়-বিক্রয় দাম ১০ পয়সার ব্যবধান প্রকাশ পেলেও বাস্তবে এই চিত্র ভিন্ন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত ডলারের দাম বাড়লে রেমিটার ও রপ্তানিকারকরা লাভবান হন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারক ও সাধারণ মানুষ। কারণ ডলারের দাম বাড়লে পণ্যমূল্যও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রপ্তানি আয়ে ধীরগতি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্নমুখিতার মধ্যে আমদানিতে গতি আসায় অনেক ব্যাংকে দেখা দিয়েছে ডলারের সংকট। ফলে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ডলারের দাম।

সর্বশেষ খবর