বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দুই এতিম শিশুকে নির্মম নির্যাতন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

দুই এতিম শিশুকে নির্মম নির্যাতন

ছাতকে এতিম শিশুকে বেধড়ক পেটানোর রোমহর্ষক একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২ মিনিট ৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে শ্রেণিকক্ষে স্টিলের স্কেল দিয়ে আট-নয় বছরের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধান মাওলানা আবদুল মুকিত। শিক্ষকের পায়ে ধরেও রেহাই   পায়নি শিশুটি। ঘটনাটি ঘটেছে ছাতক উপজেলার হাজি ইউসুফ আলী এতিমখানা হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসায়। কয়েক মাস আগে নির্যাতনের এ দৃশ্যটি ধারণ করা হলেও দুই দিন আগে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন স্থানীয় নেটিজেনরা। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হলে এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিচার দাবি করেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। কারণে-অকারণে এতিম শিশুদের নির্যাতন মাদরাসাটির সুপার মাওলানা আবদুল মুকিতের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এর আগে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। শিশু নির্যাতনের রোমহর্ষক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সুপার মুকিতকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে দায় সারেন কর্তৃপক্ষ। রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত আবদুল মুকিত ইতিমধ্যে অন্য একটি মাদরাসায় চাকরি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে- পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত তিন এতিম শিশু রাজাপুর গ্রামের আবু তাহের, শফিউর রহমান ও নিলয় মিয়া জড়সড়ো হয়ে সুপার মুুকিতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শফিউর ও নিলয়কে এর আগেই পেটানো হয়। আট-নয় বছরের আবু তাহেরকে দুই হাত এগিয়ে দিতে বলেন। নির্দেশ পেয়ে শিশুটি হাত এগিয়ে দিলে স্টিলের স্কেল দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে সুপারের পা জড়িয়ে ধরে শিশুটি। এতেও মন গলেনি তার। মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকেন। সহ্য করতে না পেরে ‘হুজুর আফনার ফা’ত ধরি, হুজুর। আফনার ফা’ত ধরি। ও মা গো। হুজুর আফনার ফা’ত ধরি। আল্লা গো আর জীবনে ইতা খরতাম না’ আর্র্তচিৎকার করতে থাকে শিশুটি। সর্বশক্তি দিয়ে দুই মিনিটের বেশি সময় ধরে দানবীয় ভঙ্গিতে শিশুটিকে পেটান মুকিত। নির্যাতন অব্যাহত থাকা অবস্থায় গোপন ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গেলে শিশুটির শেষ পরিণতি দেখা যায়নি। জানা গেছে, কয়েক মাস আগে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা শিশু নির্যাতনের ওই ভিডিওটি এতিমখানার যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পরিচালকদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা তাকে শাস্তি না দিয়ে মাদরাসা থেকে অব্যাহতি দেন। ৬ নভেম্বর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি কমর উদ্দিন স্বাক্ষরিত অব্যাহতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- এর আগেও এতিম শিশুদের পেটানোর কথা কর্তৃপক্ষের কাছে স্বীকার করেছেন সুপার মুকিত। পরিচালনা কমিটি বারবার সতর্ক করার পরও শিক্ষার্থীদের গালাগালি, শারীরিক ও মানসিক প্রহার পরিত্যাগ না করায় তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্যাতনের ভিডিওটি পুরনো। সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

সর্বশেষ খবর