শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিচ্ছিন্নতায় বাড়ছে আত্মহত্যার ঝুঁকি

-ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

বিচ্ছিন্নতায় বাড়ছে আত্মহত্যার ঝুঁকি

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে এখন মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে সে কারণে আত্মহত্যার ঝুঁকিও বাড়ছে। মানুষ যখনই বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে এবং অন্য মানুষের সঙ্গে তার বন্ধন কমতে থাকে তখন তার পক্ষে আত্মহত্যা করা অনেক সহজ। যারা বিচ্ছিন্ন মানুষ, বিয়ে করেনি এমন মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব বলেন।

এই চিকিৎসক বলেন, আমাদের এখন এক ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হচ্ছে। আর এ অবস্থার  মধ্যে যে তরুণ প্রজন্ম বড় হয়ে উঠছে সেখানে এক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে যে কিশোর ও তরুণরা একক পরিবারে বড় হয়ে উঠছে কিংবা পরিবারিক বন্ধন আগের তুলনায় শিথিল হয়ে পড়ায় সমস্যা বাড়ছে। আবার দিন যত যাচ্ছে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আগে সন্তানদের ওপর অভিভাবকদের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল তা এখন কমে এসেছে। আর এই পরিবেশে শিশু-কিশোরদের যে ব্যক্তিত্ব গঠিত হচ্ছে এতে তাদের মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এটি আত্মহত্যা করার একটি কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, সাধারণত কম বয়সীদের ক্ষেত্রে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মহত্যা ঘটে। আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু কম বয়সীরা অভিমানবশতও আত্মহত্যা করতে পারে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে তারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মহত্যা ঘটায়। সাধারণত কম বয়সে মানুষ তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আবার ইমপালসিভ (আবেগপ্রবণ) হওয়ায় তারা হঠাৎ করে আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা ঘটায়। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দেশে ডিপ্রেসিভ অর্ডারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের রোগীরা আত্মহত্যা করে। তবে এ ধরনের রোগীদের যখন আত্মহত্যা করবে কি না জানতে চাওয়া হয় তখন তারা আত্মহত্যা করার ইচ্ছা তাদের মধ্যে আসে এটি যেমন জানান একই সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জানান যে আত্মহত্যা করলে গুনাহ হবে ফলে এটি এক ধরনের নিরাপত্তার কাজ করে। অর্থাৎ ধর্মীয় মূল্যবোধ এখানে রোগীটিকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনছে। সমস্যা হচ্ছে কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের মূল্যবোধ সেভাবে কাজ করে না। ডা. রায় পোদ্দার বলেন, আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিবার থেকে জীবনমুখী শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন নিয়ে আসা প্রয়োজন। শিশু-কিশোর ও তরুণদের মানসিকভাবে সহায়তার জন্য শহরগুলোয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কাউন্সেলর নিয়োগ দেওয়া দরকার। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে কিছু হেল্পলাইন চালু করা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর