রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশের কারাগারে বন্দী বিদেশিরা

৪৬৬ জনের অধিকাংশ ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিক

আলাউদ্দিন আরিফ

দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৪৬৬ জন বিদেশি (রোহিঙ্গা ছাড়া) বন্দী রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিক। এর বাইরে কক্সবাজার জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন কারাগারে উদ্বাস্তু মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) আছেন আরও প্রায় ৮০০। বিদেশি বন্দীদের অনেকের মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা না জানা, তাদের খাবার নিয়ে সমস্যাসহ নানামুখী জটিলতায় পড়তে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে। তবে আশার বিষয় হলো বিগত বছরগুলোর তুলনায় বিদেশি বন্দীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি বন্দীর সংখ্যা ছিল ৫৭৭ জন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৫০৩ জন। সংখ্যা কমার কারণ কিছু বন্দীর সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে আরও কিছু বন্দীকে জিম্মাদারের অভাব, পাসপোর্ট জটিলতাসহ নানা কারণে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের দ্রুত মুক্তির বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গত ৩০ অক্টোবর দেশের কারাগারগুলোতে বিদেশি বন্দীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬৬ জন। জামিন পাওয়া ও সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া বন্দীদের দ্রুত ছাড়ার ব্যবস্থা করায় কারাগারে বিদেশি বন্দীর সংখ্যা কমে আসছে। কোনো বিদেশি বন্দীর জামিন পাওয়া বা সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্রই আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কারাগারগুলোতে বিদেশি বন্দীদের বিশেষ নিরাপত্তায় রাখার পাশাপাশি তাদের বাড়তি নজরদারিতে রাখা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশি নাগরিক যারা বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, মাদক, মানব পাচার বা চোরাচালানে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলাই বেশি। মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, এটিএম (অটোমেটিক ট্রেইলর মেশিন) কার্ড জালিয়াতির কারণেও অনেকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছেন। আবার ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিকদের অনেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে আছেন। মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাচালানে জড়িত থাকার কারণেও মিয়ানমার ও ভারতের বিপুলসংখ্যক নাগরিক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

জানা গেছে, নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার কিছু দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশের স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে মিলে প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধ চক্র গড়ে নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন। প্রতারণার মাধ্যমে  তারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশিদের অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে ডিবি পুলিশ ও সিআইডি বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেফতার করে মামলা দিয়েছে। এসব দেশেরও বেশ কিছু বন্দী কারাগারে আছে। কারা অধিদফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতি মাসে বিদেশি বন্দীর হালনাগাদ তথ্য পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন কারাগারে ভারতীয় বন্দী প্রায় ২০০ জন। তাদের মধ্যে কয়েদি ১০ জন, হাজতি আছে প্রায় ১০০ জন। প্রায় ৮০ জন বন্দী শাস্তির মেয়াদ শেষে মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। জামিনদার পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তাদের মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে মিয়ানমারের নাগরিক বন্দী আছে প্রায় ১৪০ জন। তাদের মধ্যে কিছু বন্দী সাজার মেয়াদ শেষে মুক্তির অপেক্ষায় আছে। সাজাপ্রাপ্ত ২৩ এবং হাজতি ১১৮ জন। কারাগারে নাইজেরিয়ার নাগরিক আছে ৬৮ জন, পাকিস্তানের ১৯ জন, পেরুর ২ জন, তানজানিয়ার ২ জন, ক্যামেরুনের ৮ জন, আলজেরিয়া, ইরান, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালি ও উগান্ডার ১ জন করে বন্দী আছে। নেপালের দুজন, মালয়েশিয়ার ৬ জন বন্দী আছে। জাপানের ৩, গিনির ২, চীনের ৯ জন, ইউক্রেনের ৬ ও ঘানার ৩ জন বন্দী কারাগারে আছে।

জানা গেছে, দেশের যেসব কারাগারে বিদেশি বন্দী আছে, তাদের দেখাশোনার জন্য আলাদা লোক রাখা হয়। কারাগারে মাঝে মাঝে এমন বন্দী আসে, যারা ইংরেজি, আরবিসহ পরিচিত ভাষাগুলোর কোনোটাই জানে না। ফলে কারাগারে বন্দী অবস্থায় তারা কী চায় সেটা বুঝতে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কখনো কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের শরণাপন্ন হতে হয়। দূতাবাস থেকে লোকজন এসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে তার প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো জানার পর  সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারাগারগুলোতে সাধারণত বিদেশি বন্দীদের নির্দিষ্ট সেলে রাখা হয়। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) দিয়ে তাদের মনিটরিংয়ে রাখা হয়। এসব বিদেশি বন্দীর ভাষায় ভিন্নতা থাকায় তারা নিজেরাও ভাষা সমস্যায় থাকে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুজন বিদেশি বন্দী আছে। তাদের আলাদাভাবে দেখভাল করা হয়। কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার নেছার আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কক্সবাজারের কারাগারেই প্রায় ৮০০ রোহিঙ্গা বন্দী আছে। তাদের ‘শরণার্থী’ হিসেবে ধরা হয়। তাই মূল বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে তাদের হিসাব নেই। রোহিঙ্গা ছাড়াও মিয়ানমারের অন্য জনগোষ্ঠীর কিছু নাগরিক কক্সবাজার কারাগারে রয়েছে। তবে তারা বিদেশি বন্দীর তালিকাভুক্ত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর