শিরোনাম
রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যয় ভোগান্তি অনিশ্চয়তা সবই বেড়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়

আকতারুজ্জামান

ব্যয় ভোগান্তি অনিশ্চয়তা সবই বেড়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়

উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) ধারার ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন শুরু হয়েছিল সেটি এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে ভর্তি ইচ্ছুকদের কাছে। কারণ, এ পদ্ধতির পরীক্ষার কারণে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ব্যয়, ভোগান্তি, অনিশ্চয়তা সবই বেড়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা একটি স্কোর পেলেও এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা আবেদন করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রতি আবেদনের ক্ষেত্রে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, যা অনেক ভর্তি ইচ্ছুক ও অভিভাবকের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কোনো কোনো বিষয়ে ভর্তির আবেদন করলে বসতে হবে পরীক্ষাতেও।

জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন উম্মে হাবিবা ইউশা। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, অধিকাংশ ভর্তি ইচ্ছুকই মধ্যবিত্ত পরিবারের। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় ১২০০ টাকা ফি নেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ফের ৬০০ টাকা করে আবেদন ফি নিচ্ছে। এভাবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্ব আর থাকল কোথায়? ইউশা আরও বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য চারটি ইউনিট রয়েছে। প্রতি ইউনিটে আবেদনের জন্য ৬০০ টাকা নেওয়া হবে, তাহলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আর লাভ কী হলো? শামসুন্নাহার নামে আরেক ভর্তি ইচ্ছুক বলেন, ‘গুচ্ছভুক্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তির জন্য ৫০০ টাকা ফি জমা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া এই  বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ও চারুকলা বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে আবেদন করলে ফের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে, যা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই স্থাপত্য বিভাগে ভর্তির আগ্রহ থাকলেও আবেদন করিনি।’ জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত জগন্নাথ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খুলনা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কুমিল্লা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিটি আবেদনের ক্ষেত্রেই ভর্তি ইচ্ছুকদের পরিশোধ করতে হবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরীক্ষা নেওয়ার পর শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করে আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে ফি আরোপের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এ ক্ষেত্রে সমন্বিত ভর্তি কমিটির কোনো মন্তব্য নেই। তবে ভর্তি ইচ্ছুকদের অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষকদের আয় কম হয়েছে, তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের আবেদন ফি নেওয়া হচ্ছে। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘নতুন করে ফি চাওয়ার মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠে এমনটা আমরা প্রত্যাশা করি না। কতিপয় শিক্ষক আর্থিকভাবে লাভবান হতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে চড়া ফি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

এই ফি বাতিলের দাবি জানাই।’ ভর্তি-সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি এটুকু বলেন, ‘পরীক্ষা তো নিতে হবে না, তাহলে কেন এত ফি দিতে হবে? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলতে পারবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আর ছুটতে হবে না- এমন প্রত্যাশা নিয়েই প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর