মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিল্পীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিল্পীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনা

বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীদের নিয়ে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ভারতীয় হাইকমিশন ঢাকার ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। নিজ নিজ গোত্রের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে এতে অংশ নেয় বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার আদিবাসীরা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো শিল্পীরা।

ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা বর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বছরব্যাপী অনুুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর গুলশানের ইন্ডিয়া হাউসে অনুষ্ঠিত হয় এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই গারো ভাষার গানের সুরে বাঁশিতে সুর ছড়ান ম্যাথিউস রাংসা। এরপর ত্রিপুরা ভাষার গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য। হাজং ভাষার গানের সুরের সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন অভ্র নকরেক ও মিশ্র চিসিম।

গারোদের ওয়ানগালা উৎসবে পরিবেশিত সংগীতের সুরে নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এই আসর।

এর আগে স্বাগত বক্তৃতা করেন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক নীপা চৌধুরী।

শিল্পকলায় অনুস্বরের তিনকড়ি মঞ্চায়ন : ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে ব্রিটিশরা। আর সেই বিষের কারণে শুধু মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কই নষ্ট হয়নি, ঘুণে ধরেছে বহু বছরের সামাজিক ভারসাম্যে। সাম্প্রদায়িকতার বিষের পাশাপাশি বগুড়ার দীঘলকান্দি গ্রামের তিনকড়ির বাঘমারার বীরত্বের কথা ও বেশ্যাপল্লীর আনন্দীকে বিয়ে করার গল্পও ওঠে আসে মানুষের মুখে মুখে। সাম্প্রদায়িক বৈরিতার মধ্যেও এক দেশপ্রেমিক আঁকড়ে থাকে দেশকে। এমন গল্পকে কেন্দ্র করে নাটকের দল অনুস্বর মঞ্চায়ন করেছে নাটক ‘তিনকড়ি’। গতকাল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। এটি ছিল নিয়মিত প্রযোজনার পঞ্চম মঞ্চায়ন।

মাহবুব আলমের রচনায় নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন সাইফ সুমন। অখণ্ড ব্রিটিশ-ভারতের পূর্ববঙ্গের বগুড়ার একটি গ্রাম দীঘলকান্দি। গ্রামের উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়া মিলিয়ে এখানে বসবাস করে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ। দীঘলকান্দির চারপাশ ঘিরে আরও আছে সুখোনপুকুর, লোহাগাড়া, কাতলাহার, সোনাতলা আর আছে এক বগারবিল- এসব নিয়ে এক গ্রামীণ জনপদ। কৃষক জীবনের নিত্যনৈমিত্তিকতা ছাড়াও বৈশাখী মেলা, মাছ ধরা, গান-কীর্তনের আসর, কুস্তিলড়াই- এসব নিয়ে হাসি-আনন্দে-উদযাপনে কেটে যাচ্ছিল তাদের যাপিত জীবন। এক দিন খুব নিকটবর্তী হয় ১৯৪৭ সাল। বাড়ে ধর্মীয় উন্মাদনা ও উগ্রতা। সেই উগ্রবাদের তীব্র আঁচে জন্ম-জন্মান্তরের সহাবস্থান সজোরে হোঁচট খায়! যেন অনেকটাই অচেনা হয়ে ওঠে পরস্পর, পাশের বাড়ি, এমনকি প্রিয় বান্ধবও। যেন দহন আর দাহতে বিপর্যয় ঘটে মানবিক চেতনার। সেই দুঃসময়ের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় পূর্ববঙ্গের একটি জনপদ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এমন বৈরী সময়ে সাম্প্রদায়িকতার বাইরে বীর তিনকড়ি বিয়ে করে বেশ্যাপল্লীর আনন্দীকে। লড়াই করে গ্রামে হঠাৎ গজে ওঠা সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। ধর্মীয় রোষানলের বলি হয় তিনকড়ির বৃদ্ধ বাবা। তার বাবাকে জবাই করে হত্যার পরও সে নিজের ভিটা-মাটি-দেশ ছাড়ে না। জীবনসঙ্গিনী আনন্দীকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানের আগমন উদযাপন করতে চায় আপন ভিটায়। আশায় বুক বেঁধে থাকে- মানুষ এক দিন মানুষ হবে! এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনি। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- মোহাম্মদ বারী, এস আর সম্পদ, প্রশান্ত হালদার, সাথী রঞ্জন দে, মাহফুজ সুমন, পারভীন পারু (প্রাচ্যনাট), ফরিদা লিমা, মিঠু, শাকিল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর