মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

কাটারিভোগ চাল-চিড়া দেশে-বিদেশে সমাদৃত

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

কাটারিভোগ চাল-চিড়া দেশে-বিদেশে সমাদৃত

দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদৃত। এখনো অনেক মানুষ দিনাজপুরে এলে এখানকার কাটারিভোগ চাল-চিড়া নিয়ে যেতে ভুলেন না।

এক সময় অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কাজ আদায়ে কিংবা রাজনীতিতে সুবিধা নিতে কাটারিভোগ চাল ও চিড়া অনেকে রাজধানীতে গণ্যমান্য ব্যক্তি, পদস্থ কর্মকর্তা ও নেতাদের ভোগ দিয়েছেন। তবে এ অঞ্চলে কাটারিভোগ চাল অভিজাত শ্রেণির বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে স্থান পেয়েছে। আজও দিনাজপুরের কাটারিভোগ সুগন্ধি চাল দেশি-বিদেশি অতিথি আপ্যায়নে সুনাম রয়েছে। এ চালের পোলাও, বিরিয়ানি, জর্দা, পায়েশ, ফিরনি চমৎকার ও সুস্বাদু। ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ চাল-চিড়ার সুগন্ধি আজ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ফলন কমসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে চাষও কমে যাচ্ছে। কাটারিভোগ দিনাজপুরে আর্যদের আগমনের আগে থেকেই চাষ হতো। কাটারিভোগ চাল মাথার দিকে একটু চোখা ও বাঁকা, আছে সুগন্ধি, খেতেও সুস্বাদু। আর এ ধানের চিড়া হয় হালকা সাদা ও মিষ্টি সুগন্ধ। এখন দেশি কাটারিভোগের চাষ দেখা না গেলেও ফিলিপাইনে কাটারিভোগ ধান চাষ হচ্ছে বেশি। দিনাজপুরের সব এলাকায় এই কাটারিভোগ ধান চাষ হয় না। দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর এবং কাহারোল উপজেলার দু-একটি উঁচু জায়গায় এ বিশেষ জাতের ধান চাষ হয়। কাটারিভোগ নিয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রাজাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে। রাজা প্রাণনাথ সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে হীরা, পান্না, স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও কাটারিভোগ চাল সঙ্গে নিয়ে যান। সম্রাট হীরা, পান্না উপঢৌকন হিসেবে পেয়ে যতটা না খুশি হয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন কাটারিভোগ চাল পেয়ে। এই খুশিতে সম্রাট প্রাণনাথকে ‘মহারাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কৃষিবিদরা বলছেন, একই জমিতে একাধিক ফসল আবাদ ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ এবং জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করার কারণে কাটারিভোগের সুগন্ধি কমে যাচ্ছে। দিনাজপুর সদরের শেখপুরা ইউপির মাধবপুর গ্রামের চিড়াকুটা পাড়ার কৃষক চিত্তরঞ্জন রায় জানান, কাটারিভোগ ধান চাষে গোবর সার প্রয়োজন হয়। কিন্তু গোবর সার পর্যাপ্ত পাওয়া না যাওয়ায় বিপাকে পড়ে চাষিরা। খেতে গোবর সার দিলেও পাশের খেতের রাসায়নিক সারের প্রভাবে ঘ্রাণ ও গুণগত মান বজায় থাকে না। আমি গতবার ৬ বিঘা জমিতে কাটারিভোগ চাষ করেছিলাম। এবার ৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আশা করছি বিঘাপ্রতি ১৬-১৭ মণ ধান পাব। কিন্তু খরচ অনেক হয়েছে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গত অর্থবছর ১ লাখ ৬ হাজার ৬২১ হেক্টর জমিতে কাটারিভোগ চাষ হয়েছে। যদিও গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর আবাদ কমেছে। চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমিতে। তবে দেশীয় কাটারিভোগ ধান চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে।

সর্বশেষ খবর