বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মাস্টারপ্ল্যানে পায়রা কুয়াকাটা

দক্ষিণের সাত উপজেলা নিয়ে হচ্ছে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মাস্টারপ্ল্যানে পায়রা কুয়াকাটা

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা ঘিরে পর্যটনভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছে সরকার, যার মনিটরিং করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মাস্টারপ্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটন স্থাপনা, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ণ, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাভিত্তিক কার্যক্রম। আগামী ২০ বছরে এ মাস্টারপ্ল্যানটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পাশাপাশি পায়রা-কুয়াকাটা নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে আইনের একটি খসড়া করা হয়েছে। আইনটি অনুমোদনের জন্য কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে কর্তৃপক্ষ গঠনের গেজেট জারি হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের করা মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী একটি আধুনিক বন্দরনগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে পায়রাকে। একই সঙ্গে পরিকল্পিত পর্যটননগরী হিসেবে কুয়াকাটার উন্নয়ন করা হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। এতে কুয়াকাটা পরিণত হবে দেশের অন্যতম পর্যটননগরীতে। বন্দরনগরী ও পর্যটননগরী মিলে দক্ষিণের অর্থনীতির গতিধারা বদলে দেবে।

জানা গেছে, ‘পায়রা বন্দরনগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ পর্যটনভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ মহাপরিকল্পনাটি করা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার সাত উপজেলা- পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী এবং বরগুনার সদর, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটাকে এ মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার আবাসন, পর্যটন, জীবিকা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক, নগর উন্নয়ন অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ পরিকল্পনাবিদ শরীফ মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপকূলীয় এলাকায় আগামী ২০ বছর পর্যন্ত সরকারের যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা আছে সেগুলো নিয়ে একটি কমপ্রিহেনসিভ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। এরপর সেই মাস্টারপ্ল্যানটি তুলে দেওয়া হবে পায়রা-কুয়াকাটা নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। মাস্টারপ্ল্যানে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে সেগুলোকে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মধ্যে এনে ভৌত অবকাঠামো পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর বরগুনা ও পটুয়াখালীর সাত উপজেলা নিয়ে গঠন করা হবে ‘পায়রা-কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। ওই কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হবে এ উন্নয়ন পরিকল্পনা। মহাপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের পর্যটনশিল্পের বিকাশ এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর কেন্দ্র করে একটি আধুনিক বন্দরনগরী গড়ে তোলা। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব সমুদ্রবন্দর গড়ার মাধ্যমে ইকোট্যুরিজমের বিকাশ ঘটানো। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা। জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার এমবি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় রাঙ্গাবালীর সোনার চরকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র করে গড়ে তোলা এবং কুয়াকাটা, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার সমন্বয়ে পর্যটন জোন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালে পায়রা-কুয়াকাটা ঘিরে মহাউন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ২৭ সদস্যের সমন্বয় কমিটি করা হয়। সূত্র জানান, পায়রা-কুয়াকাটা কমপ্রিহেনসিভ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে ওই সমন্বয় কমিটি সম্প্রতি সভা করেছে। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সে সভায় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর খাতভিত্তিক পরিকল্পনা নগর উন্নয়ন অধিদফতরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, পায়রা সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা এবং ব্লু-ইকোনমি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তারা সেখানে শেরেবাংলা ঘাঁটি স্থাপন করছেন। এ ছাড়া নৌবাহিনীর এয়ারস্ট্রিপ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। এ কাজের জন্য ৬১৭ একর জমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে আছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর