বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আদালতে মুখোমুখি মামুনুল-ঝরনা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বিচারক মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝরনাকে হিজাব খুলতে বলায় কাঠগড়া থেকে আসামি মামুনুল হক উচ্চৈঃস্বরে বলেন, ‘শরিয়তের হুকুম হিজাব খোলবা না ঝরনা’। ঝরনা একবার হিজাব খুলে বিচারককে নিজের মুখ দেখিয়ে ফের হিজাবে মুখ ঢাকেন। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। পরে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ঝরনা আদালতকে জানান, মামুনুল হক তাকে বিয়ে না করে ভোগ করেছেন। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সাক্ষ্য দেন ঝরনা। এর আগে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে তার বিরুদ্ধে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝরনার করা ধর্ষণ মামলায় সকাল ৯টায় আদালতে হাজির  করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামুনুল হককে ফের কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। সাক্ষ্য প্রদানের সময় বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর রকিবুজ্জামান রাকিব। সহযোগিতা করেন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী  সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহসীন, হাসান ফেরদৌস জুয়েল প্রমুখ। অপরদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ প্রমুখ। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাকিবুজ্জামান রকিব জানান, কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝরনা সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন। সেই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। বাদীকে উভয় পক্ষ জেরা করেছেন। আদালতের কাঠগড়ায় প্রথমে মামুনুল হক বার বার বাদীকে উদ্দেশ্য করে দিক নির্দেশনামূলক কথা বলার চেষ্টা করেছেন। পরে অনুরোধ করার পর তিনি চুপ থাকেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে শহীদুল ইসলামের সঙ্গে ঝরনার দাম্পত্য জীবন সুখে-শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল। তাদের ১৭ ও ১৩ বছর বয়সী দুই সন্তান আছে। স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুল হকের সঙ্গে ঝরনার পরিচয় হয়। সাংসারিক টানাপোড়েনের একপর্যায়ে মামুনুলের ‘পরামর্শে’ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট শহীদুলের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। জান্নাত এজাহারে অভিযোগ করেন, বিচ্ছেদের পর তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল তাকে ঢাকায় আসার জন্য ‘প্ররোচিত’ করেন। ঢাকায় আসার পর তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীর বাসায় রেখে মামুনুল নানাভাবে তাকে ‘কুপ্রস্তাব’ দেন। এর ধারাবাহিকতায় মামুনুলের পরামর্শে কলাবাগানে এক বাসায় সাবলেট থাকতে শুরু করেন এবং বিয়ের আশ্বাস দিয়ে এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। বাদী আরও অভিযোগ করেন, ঘোরাঘুরির কথা বলে ২০১৮ সাল থেকে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে তাকে নিয়ে যেতেন। সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ঘুরতে নিয়ে গিয়েও মামুনুল হক তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। মামুনুল হক গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এসে মামুনুল হককে ঘেরাও করেন। পরে ওই রিসোর্টে স্থানীয় হেফাজতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা এসে ব্যাপক ভাঙচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান। তবে ঘেরাও থাকাবস্থায় এই হেফাজত নেতা জানান, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর