শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

নাটোরে পাবদা মাছ চাষে সফলতা

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

নাটোরে পাবদা মাছ চাষে সফলতা

পাবদা মাছ চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরিয়া গ্রামের মাছ চাষি রিগান হোসেন। পাঁচটি পুকুরে চাষ করেন পাবদা মাছ। প্রতি বছর মাছ ভারতে রপ্তানি করে আয় করেন ৪০ লাখ টাকা। তার দেখাদেখি এখন এলাকার অনেকেই মাছ চাষে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন।

জানা যায়, রিগান হোসেন রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১২ সালে মাস্টার্স শেষ করেছেন। তারপর কুমিল্লায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।

পরে তিনি চাকরিটি ছেড়ে পুরোপুরি মাছ চাষে মনোযোগ দেন। ২০১৪ সালে নিজ অর্থে গড়ে তোলেন মৎস্য আড়ত। যেখান থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো শুরু করেন। শুরুতে খুব একটা সফলতা না পেলেও ছাড়েননি ব্যবসা। আঁকড়ে ধরে ছিলেন দীর্ঘ ছয় বছর। হঠাৎ একদিন ভাবলেন, কীভাবে দেশের বাইরে দেশীয় প্রজাতির মাছ রপ্তানি করা যায়। যেই ভাবনা, সেই কাজ। ২০১৯ সালে শুরু করেন পাবদা মাছ রপ্তানি। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬০০ মেট্রিক টন পাবদা মাছ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছেন। বর্তমানে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। তার এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ জন তরুণের। পুকুর থেকেই ২৫০-৩৫০ টাকা কেজি দরে পাবদা বিক্রি হয়। মাছ চাষি রিগান জানান, প্রথমে আমার মৎস্য আড়ত ছিল, এখনো আছে। আড়ত শুরু করার পর থেকে মাছগুলো যেত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একদিন ভাবলাম চলনবিলে পাবদা মাছ উৎপাদিত হচ্ছে, এ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু। দেশের বাইরে কীভাবে এ মাছ রপ্তানি করা যায়। তখন যাদের এলসি করা আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ২০১৯ সালে প্রথম চালান পাঠাই। পর্যায়ক্রমে ৬০০ মেট্রিক টনের ওপরে পাবদা রপ্তানি করেছি। সপ্তাহের পাঁচ দিন পাঁচ মেট্রিক টনের ওপরে পাবদা রপ্তানি হচ্ছে। যা এখন শুধু ভারতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৯ সালে চীন, সৌদি আরবেও গেছে।  প্রতিদিন পাঁচ মেট্রিক টন পাবদা পাঠাতে তার খরচ হয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা। মাসিক আয় ৫ লাখ টাকা। বার্ষিক আয় হয় খরচ বাদ দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা।

পাবদা রপ্তানিকারক মো. রিগান জানান, প্রতি বছর চলনবিল এলাকা থেকে ৫০০-৬০০ মেট্রিক টন পাবদা বিভিন্ন জেলা ও ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে। পচনশীল পণ্য হলেও এ মাছ প্রায় এক সপ্তাহ ভালো থাকে। এ কারণে প্যাকেটজাত হয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভালোভাবেই চলে যায়। রপ্তানিকারকদের কোথাও চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় না। খুব সহজে গাড়ি জেলায় জেলায় যায়। এ কৃতিত্ব আইসিটি প্রতিমন্ত্রী  ও সিংড়ার এমপি জুনাইদ আহমেদ পলকের। শুল্ক কমানোর পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হলে পাবদা মাছ শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশে রপ্তানি করা সম্ভব। সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লাহ ওয়ালিউল্লাহ জানান, কৃষির যে কোনো সেক্টরের তুলনায় পাবদা চাষ লাভজনক। এ মাছের চাষ বৃদ্ধিতে নিয়মিত খামারিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিক্রিতেও সহযোগিতা করা হচ্ছে। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় পাবদা খামারিরা দিনদিন লাভবান হচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর