রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জাল রুপি সিন্ডিকেটে আবারও পাকিস্তানি দানিশের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাকিস্তানে ছাপানো জাল ভারতীয় রুপি শ্রীলঙ্কা হয়ে পাথরের কনটেইনারে করে বাংলাদেশে আনা হয়। এরপর তা ভারতে পাচার করা হয়। এমন একটি আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ ভারতীয় জাল মুদ্রা পাচারকারী চক্রের দুজনকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ওই দুজন হলো- ফাতেমা আক্তার অপি ও শেখ আবু তালেব। বাংলাদেশি ফাতেমা পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ দানিশের স্ত্রী। ১০ বছর আগে গ্রেফতার হয়েছিল দানিশ নিজে এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার অপি। ফাতেমা গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দানিশ সিন্ডিকেটের ফের খোঁজ পেল পুলিশ। শুক্রবার রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ফাতেমাকে এবং ডেমরা থেকে তালেবকে গ্রেফতার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। গতকাল মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিসি (মিডিয়া) ফারুক হোসেন, গুলশান বিভাগের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম, এসি হুমায়ুন কবীর ও আবু তালেব। মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, খিলক্ষেতের বনরূপা আবাসিক এলাকার মেইন গেটের সামনে থেকে ফাতেমা আক্তার অপিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৫০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি জব্দ করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখানের পন্ডিতপাড়া এলাকায় তার নিজ বাসার পানির ট্যাংকের ভিতর থেকে আরও ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ডেমরার সারুলিয়া থেকে চক্রের অপর সদস্য আবু তালেবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ফাতেমা আক্তার অপি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল মুদ্রা এনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিত। এ ছাড়া জাল মুদ্রা ভারতে পাচার করত। গত ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার হওয়া তালেব জব্দ করা ভারতীয় জাল মুদ্রা ফাতেমার কাছে হস্তান্তর করেছিল। তালেব পাকিস্তানি নাগরিক সুলতান ও শফির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে এসব জাল মুদ্রা শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। ফাতেমার বিরুদ্ধে জাল টাকা সংক্রান্তে মতিঝিল থানায় মামলা রয়েছে। ১০ বছর আগে ২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ডিবি পুলিশ ১০ লাখ জাল ভারতীয় রুপিসহ গ্রেফতার হয় দুই পাকিস্তানি নাগরিক দানিশ, সাব্বির আলী এবং দানিশের স্ত্রী বাংলাদেশি ফাতেমা আক্তার। ২০০৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর রুবিনা হোসাইন নামের এক পাকিস্তানি নারীকে ভারতীয় মুদ্রাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রায় চার বছর আগে সেই দানিশের দুই সহযোগী জাল রুপিসহ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ধরা পড়ে। এদিকে ডিবি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর আদাবরের মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের ১১ নম্বর সড়কের ১৫/১ নম্বরের একটি ভবনে জাল মুদ্রা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় ডিবি। তৎকালীন ডিবির এডিসি মো. শাহ্জাহান এবং এসি গোলাম সাকলায়েন ছদ্মবেশে ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে যাবতীয় মালামাল জব্দসহ জাল নোট সিন্ডিকেটের বুলবুল আহাম্মদ, খাইরুল ইসলাম, শামসুল হক, শাহীন আক্তার ও আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করেন। এদের মধ্যে পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ দানিশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী খাইরুল এবং শামসুল। দানিশ হাতেকলমে তাদের জাল নোট তৈরি শিখিয়েছেন। কাউকে জল ছাপ, কেউ কাগজ কাটা, প্রিন্ট, নিরাপত্তা সুতা লাগানোর কাজ করেন। জব্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১৫ লাখ রুপি হলেও জব্দ করা কাঁচামাল দিয়ে অন্তত ৩০ কোটি রুপির মুদ্রা তৈরি করতে পারতেন তারা। জাল নোট তৈরির জন্য কাগজে জলছাপ দেওয়ার জন্য কুষ্টিয়ায় একটি অফিস খুলেছিলেন খাইরুল-শামসুল সিন্ডিকেট। সেখানে জলছাপ দেওয়া সম্পন্ন হলে ঢাকায় নিয়ে এসে নিরাপত্তা সুতা ঢোকান কারিগররা।

সর্বশেষ খবর