মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এইচএস কোড ছাড়াই রপ্তানি হচ্ছে পাটজাত পণ্য

হয়রানির শিকার উদ্যোক্তারা, ইপিবি বলছে সমস্যা নেই

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার। এটি গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি। পাটপণ্যের এই রপ্তানি বাড়ার পেছনে কাজ করছে জুট ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট বা বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য। এদের বেশির ভাগই হ্যান্ডিক্রাফট। হাতে তৈরি বৈচিত্র্যময় এই পাটপণ্যের বিদেশে চাহিদা বাড়লেও রপ্তানিকারকরা পড়ছেন সমস্যায়। কারণ ডাইভারসিফাইড পাটপণ্যের সুনির্দিষ্ট কোনো এইচএস কোড নেই। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এসব পর্যালোচনা উঠে এসেছে। শেষে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাটের নতুন নতুন পণ্য চিহ্নিত করে সেগুলোর এইচএস কোড বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। পাটশিল্পের উদ্যোক্তাদের নিয়ে গত ২৩ নভেম্বর এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। গতকাল এর কার্যবিবরণী বিভিন্ন সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এইচএস কোড বা হারমোনাইস সিস্টেম কোড হচ্ছে পণ্য শনাক্তকরণ নম্বর, যার মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যটি সুনির্দিষ্ট করা হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এইচএস কোড ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। এটি দেখেই পণ্যের ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। ফলে রপ্তানিকারকরা যখন পাটের নতুন কোনো পণ্য তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করতে যান, তখন সেটি শনাক্ত করার জন্য নতুন এইচএস কোড দরকার পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে পাটের তৈরি ক্রাফটস পণ্যের মধ্যে ব্যাগ, বাস্কেট, ফ্লোরম্যাট, জুয়েলারি বক্স, কোস্টার (গ্লাস বা চায়ের কাপের নিচে রাখার ম্যাট), ফ্লাওয়ার ড্যাস (ফুলের স্টিক রাখার খোল), শপিংব্যাগ, মানিব্যাগ, হাতমোজা ইত্যাদি পণ্যের বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে ঘরের শোভা বৃদ্ধি ও গৃহস্থালি কাজে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যাও বাড়ছে।

পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী মো. হাকিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্টের চাহিদা বাড়লেও এসব পণ্যের কোনো সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড নেই। একেক সময় একেক কোড ব্যবহার করে তারা পণ্য রপ্তানি করেন। ফলে রপ্তানিকারকদের শুল্কায়ন করতে গেলে কাস্টমস, এলসি করতে গেলে ব্যাংকে হয়রানির শিকার হতে হয়। ডাইভারসিফাইড পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাক্রাফটসের প্রেসিডেন্ট গোলাম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা পাটজাত পণ্যের এইচএস কোড দেওয়ার জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-তে আবেদন করেছি। বিভিন্ন সভা-সেমিনারেও বিষয়টি তুলে ধরেছি, তবে সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়- এমন তথ্য দিয়ে বাংলাক্রাফটসের সভাপতি জানান, পণ্যের শনাক্তকরণ কোড দেওয়া হলে রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বলেন, দেশে এত বেশি পাটজাত পণ্য তৈরি হচ্ছে যে এগুলোর পৃথক পৃথক শনাক্তকরণ নম্বর দেওয়া একটি জটিল বিষয়। তিনি বলেন, পাটের শিকাও পাটজাত পণ্য আবার ব্যাগও পাটজাত পণ্য। আমরা এগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছি যে নতুন নতুন অনেক পাটজাত পণ্য আছে যাদের পৃথক করে এইচএস কোড দেওয়া অত্যন্ত জটিল বিষয়। সে কারণে পাটজাত পণ্য হিসেবে এসব পণ্য রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর পৃথক এইচএস কোড না থাকায় রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান ইপিবির প্রধান নির্বাহী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর