বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকার সবচেয়ে বড় সংকট যানজট

-স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন

জিন্নাতুন নূর

ঢাকার সবচেয়ে বড় সংকট যানজট

নগর বিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, ঢাকা সিটির সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে যানজট। এখানকার কিছু রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। আবার কিছু রাস্তা দেখভাল করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিছু রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনেরও। অর্থাৎ সিটি করপোরেশনের এলাকার রাস্তার দেখভাল করে এতগুলো প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজের গুণগত মান ও সমন্বয় নেই বললেই চলে। এসব রাস্তার ভিতরে বিভিন্ন সেবাদাতা সংস্থার লাইন রয়েছে। আর সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও মেয়রকে তোয়াক্কা করে না। শুধু একটি চিঠি বা কিছু টাকা দিয়ে রাস্তা কাটা শুরু করে দেয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন আরও বলেন, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এসব কাজ করেন। তারা যেখানে যে পাইপ দরকার সেখানে সে পাইপ দিল কি দিল না তা সিটি করপোরেশন জানেও না। তবে পয়োবর্জ্য যখন রাস্তায় উপচে পড়ে তখন লোকজন সিটি করপোরেশনকেই দোষ দেয়। এই যে মেয়রকে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার ভিতর ফেলে রাখা হয়, তাঁকে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থাও করা হয় না।

এই নগর বিশ্লেষক বলেন, ড্রেনেজ সিস্টেম যথাযথভাবে করা হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জলাবদ্ধতার পানি ১০-১৫ মিনিটেই নেমে যাওয়ার কথা। অথচ ঢাকায় সে পানি ৩-৪ ঘণ্টার আগে নামে না। এখানেও ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ের অভাব। বৃষ্টির পানি নদীতে নেমে যাওয়ার কথা। খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বক্স কালভার্টগুলোয় পাথরের মতো ময়লা জমে আছে। এগুলো পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক একটি মেশিন এনেছিলেন। যা দিয়ে ভেঙে এ ময়লা পরিষ্কার করা হয়। আমরা হিসাব করে দেখলাম এ মেশিন দিয়ে যদি ঢাকার বক্স কালভার্টগুলো পরিষ্কার করতে চাই তাহলে ৩২ বছর লাগবে। জলজট আর যানজট এ দুই সমস্যা চাইলেই সমাধান করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সততা। একই সঙ্গে সমন্বয়হীনতা থেকে বের হয়ে আসা।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দ্বিখন্ডিত করা হয়েছে। রাস্তার এক পাশের নাগরিক এক সিটিতে তো অন্য পাশের নাগরিক আরেক সিটিতে বসবাস করছেন। দুই সিটি করপোরেশনের দুজন ডেপুটি মেয়র থাকা উচিত ছিল। আর মেয়র যদি একজন থাকতেন তাহলে দুই ডেপুটি মেয়রের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলত। আর যিনি সিটি মেয়র থাকতেন তিনি পুরো বিষয়টি সমন্বয় করতে পারতেন। এখন দেখছি এক মেয়র আজকে মশার ওষুধ দেওয়া শুরু করলেন তো আরেকজন তা করেন সাত দিন পর। এতে পাশাপাশি এলাকায় সেই মশার ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। আবার বাজেটের কারণে একাংশের সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর করা হলেও অন্য অংশেরটা করা যায় না। এটি সমন্বয় করার জন্য একজন সিটি মেয়র যদি আগের মতো থাকতেন তাহলে সেখানে দুই ভাগ করে দুজন ডেপুটি মেয়রের হাতে অনেক ক্ষমতা দেওয়া সম্ভব ছিল। আর সেটি সমন্বয় করা সিটি মেয়রের পক্ষে সহজ হতো। দেশে যত সিটি মেয়র রয়েছেন তার তুলনায় ঢাকা সিটির মেয়র অসম্ভব ক্ষমতাহীন। অথচ ঢাকা সিটির মেয়র ১৬ জন এমপির এলাকার ভোটে নির্বাচিত হন। এর পরও তিনি বাড়ির নকশা পাস করতে পারেন না। রাস্তা চওড়া হবে কি হবে না সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এসব সিদ্ধান্ত রাজউক নেয়। সরকারের সাতটি মন্ত্রণালয়ের ৫০টি প্রতিষ্ঠান ঢাকাকে নিজেদের মতো করে দেখতে চায়। আর এই দেখতে চাওয়ার সঙ্গে কোনোভাবেই তারা মেয়রকে সম্পৃক্ত করতে রাজি নয়। কারণ সরকারি আমলা হিসেবে তারা আজকে আছেন তো কাল চলে যাবেন। আবার একজন সিটি মেয়রকে চাইলেই সরানো যাবে না। কারণ তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি।

নগরের উন্নয়নের জন্য মেয়রের নির্দেশনা মোতাবেক অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করতে হবে। তা হলেই এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বয় করা সহজ হবে।

সর্বশেষ খবর