বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চলে গেলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর নেই। গতকাল বেলা আড়াইটায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের লাশ আজ দুপুর ১টায় বাংলা একাডেমি এবং সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর বাদ আসর আজিমপুরে বাবার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

পারিবারিক সূত্র জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ড. মো. রফিকুল ইসলামের লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরার বাসায়। সেখানে ১০ নম্বর সেক্টরের খালিদ বিন ওয়ালিদ মসজিদে এশার পর এক দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাতে লাশ রাখা হয় হাসপাতালের হিমঘরে। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, তাঁর মৃত্যু দেশের শিক্ষাঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী যেসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন তা বাংলা সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ। নজরুল গবেষণায় ড. মো রফিকুল ইসলামের অবদান অনন্যসাধারণ। বিশিষ্ট এই গুণী লেখক ও গবেষকের সাহিত্যকর্ম বাঙালি জাতিকে সব সময়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর মৃত্যুতে আমি আমার শিক্ষক, গুরুজন ও অভিভাবককে হারালাম। বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমার প্রিয় শিক্ষকের উৎসাহ ও প্রেরণা আমাকে সাহস জুগিয়েছে এবং এগিয়ে যেতে শক্তি দিয়েছে। অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রমুখ। এ ছাড়া ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষে প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কবিতা পরিষদসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন। ৭ অক্টোবর পেটের ব্যথা নিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁর ফুসফুসে পানি ধরা পড়ে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ২১ নভেম্বর তাঁকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালটির হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতার কারণে সেখানে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। এ অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে চাইলেও রফিকুল ইসলাম তাতে সায় দেননি। উল্লেখ্য, ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি একাধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক, নজরুল গবেষণা ইনস্টিটিউটের সভাপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের উপাচার্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ ভাষা, সাহিত্য ও ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে তিনি প্রায় ৩০টি বই লিখেছেন।

সর্বশেষ খবর