বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ষাটোর্ধ্বদের দেওয়া হবে বুস্টার ডোজ

চালু হচ্ছে ‘নো ভ্যাকসিন নো সার্ভিস’

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের ৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। শিগগিরই সেই দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের টিকা না নিলে কোনো ধরনের সরকারি সেবা দেওয়া হবে না। অর্থাৎ ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’। সরকার আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে কেউ দেশে ফিরলে ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে দুঃখের বিষয়, গত এক মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব জানান তিনি। সভায় করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে, গুরুতর অসুস্থ, তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। ভারতসহ আশপাশের কয়েকটি দেশ বুস্টার ডোজ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও কাজ করছি। এটা নিয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। এর মধ্যে সিঙ্গেল ডোজ ৬ কোটির মতো, ডাবল ডোজ ৪ কোটির কাছাকাছি। আমরা স্কুলের শিক্ষার্থী, বস্তিবাসী, সব পর্যায়ের লোকজনকে টিকা দেওয়ার জন্য একেবারে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত গেছি। ফাইজারের টিকাও আমরা বিভিন্ন জেলা উপজেলায় নিয়ে গেছি। তারপরও দেখা যায় অনেকে এখনো টিকা নেননি। আগে যে আগ্রহটা পেয়েছি টিকা নেওয়ার সেই আগ্রহটা একটু কম। আগে যেমন ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ছিল, এখন আমরা বলতে চাচ্ছি ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’। এটা করতে পারলে আমাদের টিকা কার্যক্রম আরও বেগবান হবে, টিকা নেওয়ার জন্য লোক এগিয়ে আসবে। কীভাবে এটা বাস্তবায়ন হবে- জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, এখানে বসেই ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ স্লোগানটা তৈরি হয়েছে। আমরা এটা চিঠির মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেব। তারা এটাকে যার যার মতো করে এনফোর্স করবে। টার্গেট লেভেলে আমরা ব্যবসায়িক সংস্থাকে জানিয়ে দেব। সরকারিভাবে সরকারি সংস্থাকে জানিয়ে দেব। আফ্রিকা থেকে কেউ দেশে ফিরলে ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওমিক্রন করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট। এটা আফ্রিকার অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশ থেকে বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশ বা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যখন কেউ আসবে, আমরা তাদের আসতে নিরুৎসাহিত করতে চাইব। তাদের সঙ্গে আমাদের যাতে কোনো ফ্লাইট না থাকে। ওখান থেকে যারাই আসুক তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বাধ্যতামূলক। সেটা হোম কোয়ারেন্টাইন নয়, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন। সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে, সেই কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজমেন্ট খুব শক্ত হতে হবে। আমরা চাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সেই কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজ করবেন। ওমিক্রন ডেল্টা থেকেও বেশি সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত হলে রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে। রোগী দুর্বল হয়, হালকা কাশি থাকে, জ্বর হয় না। যে কারণে বোঝা মুশকিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও বলেন, ডেল্টার চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে সরকার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় গত এক মাসে ২৪০ জন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন। এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ফোনও বন্ধ। আমরা দেশে সব ডিস্ট্রিক্ট কমিটিকে চিঠি দেব। যাতে বিদেশ থেকে যদি কেউ আসে তারা যদি তাদের গ্রামের বাড়িতে যায় সেটা যেন তারা মনিটরিংয়ে রাখে। প্রয়োজন হলে পতাকা লাগিয়ে দেব। দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত ২৪০ জনকে আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সবাই তাদের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা ভুল দিয়েছে। এ জন্য তাদের খুঁজে বের করতে স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে। আমাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে বলেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের করণীয় যা আছে সেগুলো যেন করে।

সর্বশেষ খবর