বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
রূপগঞ্জে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা

আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, আহত ১২

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় নাওড়া এলাকায় গতকাল  রাত ৮টায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ২০০/৩০০ সদস্যের একদল সন্ত্রাসী রাম দা, ছুরি, বল্লম, চাইনিজ কুড়াল, শটগান, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এ হামলা চালায়। হামলাকারীরা কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন মহিলা লীগের সভাপতি জোসনা আক্তারের বাড়িতে  হামলা চালায় ও বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময়  নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ ও ১২ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। গুলিতে আহত নাওড়া গ্রামের মৃত ফজুল মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়া (৪০) ও ওমেদ আলীর ছেলে রেণু মিয়াকে (৩৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আহত সুবহান (২৮), জায়েদা খাতুন (৩০), নুরজাহানকে (৩২) মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ত্রাসীদের দেওয়া আগুনে আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেনের পাঁচটি বসতঘর, ৪টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার ও কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের কার্যালয় পুড়ে যায়।

কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগম বলেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে পরাজিত হয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান, তার সমর্থক জসিম উদ্দিন জসু ও আলেক মিয়ার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়। মিজানুর রহমানের বড়ভাই রফিকুল ইসলামের নির্দেশে তারা একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আমির হামজা বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান পরাজিত হওয়ায় তার সমর্থিত সন্ত্রাসীরা একের পর এক নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। নেতা-কর্মীদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেছে। পুলিশ ও র‌্যাব নীরব ভূমিকা পালন করেছে।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ মো. জাহেদ আলী বলেন, নির্বাচনের পরদিন থেকে নাওড়া এলাকার নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িতে একের পর এক হামলা, লুটপাট চালানো হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ও র‌্যাব সন্তোষজনক ভূমিকা রাখছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা রুজু করছে না। তাতে সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়ে একের পর এক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে যাচ্ছে। গত ২৭ নভেম্বর আটজন গুলিবিদ্ধের ঘটনায়ও পুলিশ এখনো মামলা নেয়নি। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উল্লেখ, গত ১১ নভেম্বর কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ মো. জাহেদ আলী নৌকা প্রতীকে ৫৫৮ ভোট বেশি পেয়ে জয়লাভ করেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমানের পরাজয় হয়। ১২ নভেম্বর নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেত্রী লিপি আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি ও অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর