রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আতঙ্ক উপকূলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসবে। এর প্রভাবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- ঘূর্ণিঝড়টি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসবে। এর প্রভাবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে গতকাল দিনভর আকাশ ছিল মেঘলা, দেখা মেলেনি সূর্যের। আগামী এক-দুই দিন এ ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। বাংলাদেশের উপকূলে জাওয়াদের আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। তবে জাওয়াদের প্রভাবে গতকাল ভোরে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এ অবস্থায় বেড়াতে যাওয়া ১ হাজারের বেশি পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আটকা পড়েছেন। আজ ও আগামীকাল এ নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রবিবার আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সোমবার থেকে পুনরায় জাহাজ চলাচল করবে। জাওয়াদের প্রভাবে পটুয়াখালীতে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। গতকাল সকাল থেকে সারা দিনই মেঘাচ্ছন্ন আকাশে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়। সূর্যের আলো দেখা যায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গভীর বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। তবে গভীর সাগরে মাছ ধরারত ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে নিরাপদে চলাচলের জন্য বলেছে আবহাওয়া অফিস। জাওয়াদ ধেয়ে আসার খবরে গোটা পটুয়াখালী উপকূলের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। জাওয়াদের আতঙ্কে বরগুনার উপকূলবাসী। শনিবার শেষ রাত থেকেই মেঘলা আবহাওয়ার সঙ্গে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রোদের ঝলকানি দেখা গেলেও মুহূর্তের মধ্যে তা হারিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড গতকাল ২.৪১ সেমি জোয়ারের পানি রেকর্ড করে। রাতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন বেড়িবাঁধের বাইরে অবস্থানরত বাসিন্দারা। একদিকে ঠান্ডা আবহাওয়ায় শীত অন্যদিকে জোয়ারের পানিতে বসতবাড়ি প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন তারা। সকাল থেকেই বরগুনার পাথরঘাটার উপকূলীয় এলাকার আকাশ মেঘলা থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় জাওয়াদ আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী। আমনের বাম্পার ফলন হলেও জাওয়াদের খবরে চিন্তিত গলাচিপার আমন ধান চাষিরা। আমনের ভরা মৌসুম হওয়ায় এখন সব ধান প্রায় পেকে গেছে।

সর্বশেষ খবর