আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের ওপর এবং তাদের পরিবারকে করোনাকালে মানসিক সমস্যায় ভুগতে হয়েছে। কারণ আমরা সাধারণ মানুষ যে কোনো কিছু মোকাবিলা করতে পারি। কিন্তু যখন একটি প্রতিবন্ধী মানুষকে হাসপাতালে যেতে হয় কিংবা তার জীবনের পরিবর্তন আনতে হয় সেটি কিন্তু সহজে তাকে বোঝানো যায় না। কারণ তাদের প্রতিদিনের যে বাস্তব জীবন তা অত্যন্ত দুরূহ। এ অবস্থা বিবেচনায় আমরা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বিশেষ করে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, আবেগীয় বিষয় এবং স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের সমস্যাগুলো বর্তমানে বেশি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন এবং ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন অব মেন্টাল হেলথের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মো. গোলাম রাব্বানী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মানসিক রোগে আক্রান্ত হলেও আমরা দ্রুত এ অবস্থা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার জন্য অনেকগুলো কাজও হয়েছে। যদিও দেশে মানসিক সেবা দেওয়া লোকের সংখ্যা খুব কম, কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে মানুষের আচরণ পরিবর্তনের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী আমরা মানসিক রোগীদের দিয়ে এ সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছি। আমাদের মাত্রাতিরিক্ত মানসিক সমস্যার প্রাদুর্ভাব থাকলেও আমরা কিন্তু একেবারে মুষড়ে পড়িনি। একই সঙ্গে এ পরিস্থিতি সামলে ওঠার চেষ্টা করছি। এ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কায় খোদ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো দেশগুলো প্রযুক্তিগত দিক থেকে যথেষ্ট উন্নত হয়েও হোঁচট খেয়েছিল। হঠাৎ করে এ মহামারী শুরু হওয়ায় মানুষের ওপর মানসিক আঘাত আসে। এর ফলে মানুষের এক ধরনের প্যানিক অ্যাটাক হয়। মানুষের ভিতরে পোস্টমোটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার হয়। আর এগুলো হচ্ছে মানুষের আবেগের বিভিন্ন অবস্থা। তিনি বলেন, আমরা এখন যে বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছি একে নিউ নরমাল লাইফ বলা হয়। মহামারীর কারণে আমাদের এখন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে। করোনাকে প্যানডেমিক বলা হলেও বিজ্ঞানীরা একে সিনডেমিক বলছেন। কারণ সিনডেমিক শব্দের অর্থ আরও বেশি ব্যাপক। এটি শুধু মহামারী নয়, এটি মানুষকে তার দৈনন্দির জীবনের আচার-ব্যবহার ও জীবনযাপন সবকিছুই পরিবর্তন করাচ্ছে। আর এটি মহামারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য করতে হচ্ছে। আবার জীবনযাপনের ওপর এ মহামারীর যে প্রভাব তা বিশ্বব্যাপী হচ্ছে। এ জন্য অর্থনীতি, লেখাপড়া, ব্যবসা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। এতে অনেক উন্নত দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার মাঝারি ও নিম্নআয়ের অনেক দেশ ভালো অবস্থায় আছে। এর কারণে বাংলাদেশে কিছু মানুষের যেমন ক্ষতি হয়েছে আবার কিছু মানুষের ব্যবসায় লাভও হয়েছে। আর এ অবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের ঘরে বসে কাজ করতে হচ্ছে। ডিজিটাল লাইফে অভ্যস্ত হতে হচ্ছে। আমাদের মাস্ক পরতে এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হচ্ছে। সামাজিক পরিম লে অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলাচল করতে হচ্ছে। আবার এখন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আমাদের নতুন করে ধাওয়া করছে। কিন্তু এরপরও এ পরিবর্তন মানুষ অনেক দ্রুততার সঙ্গে মেনে নিচ্ছে।