শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নালা-ড্রেন যখন মৃত্যুফাঁদ

নির্বিকার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরের ‘মৃত্যুফাঁদ’ নালা নর্দমা ও ড্রেনে পড়ে গত পাঁচ মাসে পাঁচজন মারা যান। কিন্তু এ নিয়ে কোনো কর্তৃপক্ষের কার্যকর দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনার পর পরই নালা, ড্রেন ও খালের পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হয় না। নগরের প্রধান সেবা সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা থাকলেও তারা নির্বিকার।

জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে পা পিছলে নালায় পড়ে মুহূর্তেই পানির স্রোতে তলিয়ে যান ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৫০)। এখনো মেলেনি খোঁজ। তখনই চসিক বলছিল, নগরের নালা-ড্রেনের পাড়ে বাঁশের ব্যারিয়ার দেওয়া হবে। কার্যত তখন ওই ঘটনাস্থল ছাড়া আর কোথাও ব্যারিয়ার দেওয়া হয়নি। এরপর গত ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ বাদামতল মোড়ের পূর্বে উন্মুক্ত নালায় পড়ে প্রাণ হারান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। তখনো চসিক বলছিল, উন্মুক্ত নালা-ড্রেনে নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হবে। সবশেষ গত ৬ ডিসেম্বর বিকালে নগরের চান্দগাঁও ভূমি সার্কেল অফিসের পাশের চশমা খালে কিছু খুঁজতে নেমে পানির স্রোতে তলিয়ে যায় শিশু কামাল। চার দিন পর কামালের লাশ উদ্ধার করা হয় এক কিলোমিটার দূরের বির্জা খালে। গত ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে চসিক মেয়র নগরের উন্মুক্ত খাল-নালা-ড্রেনে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার ঘোষণা দেন। 

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, নগরের অনেক জায়গায় খোলা ড্রেন, নালা ও খাল আছে। তবে সেগুলো অতিঝুঁকিপূর্ণ নয়। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যু হওয়ার মতো ঝুঁকি নেই। তবুও চসিক ড্রেন-নালায়  নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার কাজ করছে। কিন্তু বড় নালা-ড্রেন যেগুলো খোলা আছে, সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প চলছে। এমন অবস্থায় সেখানে চসিক কাজ করতে পারে না। চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে। স্থানগুলো জনবহুল, এর পাশ দিয়ে চলাচল করে যানবাহন। ফলে চরম ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয় পথচারী ও যানবাহনকে। অন্যদিকে, চসিকে বর্তমানে বড় নালা আছে ১৫১টি এবং ছোট নালা আছে ১ হাজার ৫০০টি। ছোট ড্রেন আছে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার এবং ৩ ফুট প্রস্থের বড় ড্রেন আছে ৬৫১ কিলোমিটার। চসিক এসব নালা-নর্দমা থেকে দৈনিক ২ হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ টন বর্জ্য অপসারণ  করে। বর্জ্য অপসারণে আছে ভ্যান, টম টম, ট্রাক, কনটেইনারসহ নানা যানবাহন। বর্তমানে পরিচ্ছন্ন বিভাগে ডোর টু ডোর কর্মসূচিসহ মোট জনবল  আছে ৩ হাজার ৫৯৫। নগরে আছে ২৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১৪৪টি ফুটপাথ। এগুলোর গড় প্রস্থ ১ দশমিক ৪৬ মিটার। বর্তমানে নগরে ৮১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পিচঢালা সড়ক আছে ১৩৭৩টি এবং কংক্রিটের সড়ক আছে ৩২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১৩১০টি।

সর্বশেষ খবর