শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানবাধিকার বঞ্চিত খালেদা জিয়া : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জীবন বাঁচাতে বিদেশে চিকিৎসা করতে না দেওয়াটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আজ তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক তিনি। আজ তার ন্যূনতম যে চিকিৎসার অধিকার- তা  থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে লেকশোর     হোটেলে গতকাল বিকালে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এই সেমিনার হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য রাখেন। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিনের পরিচালনায় সেমিনারে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণফোরামের মোস্তফা মহসীন মন্টু, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, মজিবর রহমান সরোয়ার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, শামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, জেড খান, রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে ইংরেজিতে লেখা ‘ডিসেনফ্রানসিসমেন্ট আনডার দ্য অথরাইটেরিয়ান রিসিম’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয় এতে। অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে ‘গুম’ হওয়া সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাগ্নি আফরা আনজুম, ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভীন আখতার, ছাত্রদলের মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আখতার তাদের নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান চেয়ে আবেগময় বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, কানাডা, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের বেদনার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, গত আট বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনছি। শিশুদের কান্না শুনছি। এখনো শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে- কখন তার বাবা ফিরে আসবেন। ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বারবার এ কথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, কী নির্মমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এ দেশে।

তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’ এই দুটি পরস্পরের পরিপূরক। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার রক্ষা হতে পারে না, আর মানবাধিকার ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারবে না। আমাদের যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আছে, তাদের হিসাব- বছরে প্রায় ৬০৭ জন গুম হয়ে গেছে। আমাদের সহস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

দেশের বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণের অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের ওপর এদেশের মানুষ কোনো আস্থা রাখতে পারছেন না। কারণ বিচার বিভাগের কাছে মানুষ কোনো ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে। গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীরা সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টির আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

সর্বশেষ খবর